আলোকচিত্র সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের বিরুদ্ধে রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ২০ অক্টোবর তারিখ রেখেছে ঢাকার সাইবার ট্রাইবুনাল।
Published : 07 Sep 2021, 03:28 PM
এ মামলায় পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে মঙ্গলবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আস-সামছ জগলুল হোসেন শুনানির এই দিন রাখেন।
সেই সঙ্গে এ মামলার এজাহারে নাম থাকা মানব জমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীসহ ৩১ আসামিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন বিচারক।
এদিন কাজলকে এ মামলায় জামিনও দিয়েছে সাইবার ট্রাইব্যুনাল। কাজল এর আগে অভিযোগপত্র দেওয়া পর্যন্ত সময়ের জন্য জামিন পেয়েছিলেন হাই কোর্ট থেকে।
যুব মহিলা লীগের নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার ওয়েস্টিন হোটেলকেন্দ্রিক কারবারে ‘জড়িতদের’ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে গতবছরের ৯ মার্চ ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা করেন মাগুরা-১ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর।
একই ঘটনায় পরদিন হাজারীবাগ থানায় মামলা করেন ওসমান আরা বেলী। আর ১১ মার্চ যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আরেক সদস্য সুমাইয়া চৌধুরী বন্যা কামরাঙ্গীর চর থানায় আরেকটি মামলা করেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এ তিন মামলাতেই আসামির তালিকায় কাজলের নাম ছিল।
এর মধ্যে শেরেবাংলানগর থানায় করা মামলায় গত ৮ এপ্রিলে অভিযোগপত্র দেন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল মোল্লা।
এজাহারের ৩২ জনের মধ্যে কেবল কাজলকে আসামি করে দেওয়া ওই অভিযোগপত্রে বাকি ৩১ জনকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
কাজলের বিরুদ্ধে বাকি দুই মামলা তদন্ত ও বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানান তার অন্যতম আইনজীবী জাহিদুর রহমান।
এক সময় দৈনিক সমকাল ও বণিক বার্তায় ফটো সাংবাদিক হিসেবে কাজ করা কাজল ‘পক্ষকাল’ নামের একটি পাক্ষিক পত্রিকা সম্পাদনা করছিলেন। মামলা হওয়ার পরদিন ১০ মার্চ বকশিবাজারের বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন তিনি।
পরদিন কাজলের স্ত্রী জুলিয়া ফেরদৌসী চকবাজার থানায় গিয়ে একটি জিডি করেন। ১৮ মার্চ কাজলের সন্ধান চেয়ে চেয়ে চকবাজার থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা করেন তাদের ছেলে মনোরম পলক।
এজাহারে অভিযোগ করা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে লেখালেখির কারণে অজ্ঞাতনামা কেউ তাকে ‘অপহরণ’ করেছে।
এক সময়ের জাসদ ছাত্রলীগ নেতা কাজলের সন্ধান দাবিতে তার পুরনো রাজনৈতিক সহকর্মী, স্বজন ও সাংবাদিকদের আন্দোলনের মধ্যে সম্প্রতি কাজলের একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
ওই ভিডিওতে কাজলকে একটি জায়গায় রাস্তার পাশে মোটরসাইকেল রেখে পাশের কোথাও যেতে দেখা যায়। বেশ কিছুক্ষণ ফিরে এসে মোটরসাইকেল চালিয়ে যান তিনি। এর মধ্যে তার ওই মোটরসাইকেল ঘিরে কয়েকজনকে তৎপরতা চালাতে দেখা যায়।
প্রায় দুই মাস পর গত বছরের ২ মে যশোরের বেনাপোল সীমান্ত থেকে কাজলকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় বিজিবি। তার বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হয়।
যশোর থেকে ঢাকায় আনার পর গতবছরের ২৩ জুন কাজলকে শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচারকের মুখোমুখি করা হয়। হাকিম আদালত সেদিন কাজলের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে।
পরে হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীরচর থানার মামলাতেও কাজলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পুলিশ তাকে রিমান্ডে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করে।
গতবছরের ২৪ আগস্ট ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত কাজলের জামিন আবেদন নাকচ করলে তিনি ৮ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টে আবেদন করেন।
সেই আবেদনে গত ২৪ নভেম্বর এবং এরপর ১২ ডিসেম্বর তিন মামলায় হাই কোর্ট থেকে জামিন পান কাজল। সাত মাস কারাগারে থাকার পর ২৫ ডিসেম্বর জামিনে মুক্তি পান কাজল।