জেনারেল এইচএম এরশাদের সামরিক শাসনামলে ১৯৮২ সালে চাকরি হারানো পটুয়াখালীর বাউফলের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওবায়দুল আলম আকনের পক্ষেই সিদ্ধান্ত বহাল রাখল সর্বোচ্চ আদালত।
Published : 28 Jun 2021, 12:52 PM
সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পুনর্বিবেচনা চেয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আবেদন সোমবার খারিজ করে দিয়েছে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ।
ফলে চাকরি হারানোর ৪৩ বছর পর সে সময়ের পাট সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই কর্মী বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাসহ সমুদয় পাওনা পেতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
আদালতে মো. ওবায়দুল আলম আকনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী নোমান হোসাইন তালুকদার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্তি অ্যাটর্নি জেনারেল এস কে মোরশেদ।
নোমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের রিভিউ আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাসহ যাবতীয় পাওনা বুঝিয়ে দিতে প্রথমে হাই কোর্ট ও পরে আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছিলেন সেটিই বহাল আছে। এখন ওবায়দুল আলম আকনকে অবসর পর্যন্ত তার চাকরির সমস্ত পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে।”
আড়াই টাকা বেশি মূল্যে সরকারি পাট বীজ বিক্রির অভিযোগে ১৯৮২ সালের ১৫ এপ্রিল তৎকালীন পাট সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রাক্তন পাট সম্প্রসারণ সহকারী মো. ওবায়দুল আলম আকনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই অভিযোগে ওই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর সামরিক আদালত আকনকে চাকরিচ্যুত করার পাশাপাশি দুই মাস জেল ও এক হাজার টাকা জরিমানা করে। সাজা অনুযায়ী তিনি জেল খাটেন এবং জরিমানার টাকা পরিশোধ করেন।
এরপর চাকরি বা চাকরির পাওনা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেননি আকন। কিন্তু ২০১০ সালের পর ২০১১ সালে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে এরশাদের সামরিক শাসনামলের সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করা হলে মো. ওবায়দুল আলম আকন চাকরির পাওনা বুঝে পাওয়ার পথ খুঁজে পান।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১১ সালে জেনারেল এইচ এম এরশাদের জারি করা সামরিক শাসনকে অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখে।
সেই সঙ্গে এরশাদের ঘোষিত সামরিক শাসন, সামরিক ফরমান ও সামরিক নির্দেশ অবৈধ ও সংবিধানবিরোধী ঘোষণা করা হয় সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে।
এ রায়ের পর সামরিক আদালতের সাজা ও চাকুরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ২০১২ সালে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন আকন।
সে রিট আবেদনে চাকুরিচ্যুতি থেকে অবসর পর্যন্ত যাতীয় সুযোগ-সুবিধাসহ বেতনভাতা পেতে আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
এ রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর হাই কোর্ট রায় দেয়। রায়ে এরশাদের সামরিক আদালতের সাজা অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করে রায় দেয় হাই কোর্ট।
সেই সঙ্গে আবেদনকারী মো. ওবায়দুল আলম আকনকে তার চাকরি জীবনের অবসর পর্যন্ত বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাসহ যাবতীয় পাওনা দিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথা কৃষি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়।
১৯৭৪ সালে পাট সম্প্রসারণ সহকারী পদে যোগ দেন মো. ওবায়দুল আলম আকন। চাকরির সময়কাল অনুযায়ী ২০১২ সালে তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল।
হাই কোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আপিল করলে ২০২০ সালের ৮ মার্চ আপিল বিভাগ রায় দেয়। রায়ে বেতন-ভাতা সংক্রান্ত অংশ বহাল রেখে সামরিক আদালতের সাজা অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করে দেওয়া হাই কোর্টের রায়ের অংশটি বাদ দেওয়া হয়।
গত বছর এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ফের আবেদন করে কৃষি সম্প্রসারণ অদিদপ্তর। এ আবেদনের শুনানির পর তা খারিজ করে রায় দিল সর্বোচ্চ আদালত।