রাজধানীর বড় অংশের জলাবদ্ধতা নিরসনে গাবতলী জলাধারের ১৬৯ একর জায়গা দখলমুক্ত করতে কঠোর হওয়ার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
Published : 27 Apr 2021, 07:27 PM
মঙ্গলবার দুপুরে গাবতলী বেড়িবাধ বালুর মাঠ সংলগ্ন পাম্প হাউস এলাকা পরিদর্শন শেষে তিনি এই কথা বলেন।
অবৈধ দখলদারদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে তিনি বলেন, “অধিগ্রহণ করা জায়গা দখলমুক্ত করে সেখানে জলাধার নির্মাণে নেওয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।“
পরিদর্শনকালে মন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম অবৈধ দখলদারদের নিজে থেকে সরে যেতে বলেন। তা না হলে ‘বুলডোজার দিয়ে’ স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হবে বলে সতর্কও করে দেন তিনি।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদাবর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, মিরপুর, ধানমণ্ডিসহ বিভিন্নি এলাকার পানি এসে গাবতলীর এই জলাধারে (রিটেনশন পন্ডে) জমা হয়। সেই পানি পাম্পের মাধ্যমে অপসারণ করা হয় বলে উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান।
তারা জানান, এখন অবৈধ দখলের কারণে পুরো পানির আধার ভরাট করে বহুতল ভবন, আবাসন প্রকল্প ও বিভিন্ন স্থাপনা করা হয়েছে। মোট ১৭১ একর অধিগ্রহণ করা জায়গার মাত্র ২ একর দখলমুক্ত। বাকি জায়গা অবৈধ দখলে।
ফলে ওইসব অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে বড় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। জলাধার নির্মাণের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পুরো এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে তা ভূমিকা রাখবে বলে জানান ওই কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার জলাধার সংলগ্ন পাম্প হাউস এলাকা পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, "ঢাকা ওয়াসার মাধ্যমে এই পানির আধার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সরকারি অধিগ্রহণ করা জায়গায় অবৈধ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। যে কাজের জন্য জায়গাটি নির্ধারণ করা হয়েছে, তা দখল হওয়ায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।“
দখলমুক্ত করার কাজ শেষের পাশাপাশি প্রকল্পের কাজও হয়ে যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, “সে কারণে জায়গাটা পুনরুদ্ধার করে আমাদের যে সমস্ত অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা দরকার, সেই কাজটি করা হচ্ছে।“
পরিদর্শনকালে মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
জায়গা দখলমুক্ত করার বিষয়ে তিনি বলেন, "অবৈধ দখলদারের সিটি করপোরেশন কোনো নোটিশ দেবে না। যারা দখলদার, তাদের জন্য মেসেজ হচ্ছে, যারা জায়গাটি দখল করেছেন আপনারা চলে যান। এই এলাকাতে আপনারা যারা অবৈধভাবে আছেন- নিজেরা চলে যান, না হলে আমি চাইনা আপনাদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে ভেঙে যাক।”
এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, "এখানে ৫৩ একর জমি ওয়াসা অধিগ্রহণ করেছিল। সেটিও দখল হয়ে গেছে। জলাধারের জন্য মোট ১৭১ একর জমি আছে কিন্তু আমরা বাস্তবে পেয়েছি মাত্র ২ একর। আমরা যদি এটি দখলমুক্ত না করতে পারি তাহলে শ্যামলী, আদাবর মিরপুর ধানমণ্ডির একটা অংশের এবং এখানে হাজারীবাগের পানিও আসে, সেটিও কিন্তু নিষ্কাশন করা সম্ভব হবে না। এখানে পাম্প বসানো হয়েছে রিটেনশন পন্ডের জন্য।
"মাননীয় মন্ত্রীর মাধ্যমে আমরা পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু করলাম এবং এটি চলমান থাকবে। ঢাকা জেলা প্রশাসক আছেন উনি সীমানা নির্ধারণ করে দেবেন। এই মুহূর্তে সীমানা নির্ধারণ এবং খাল পুনরুদ্ধার করে আরো খনন করতে হবে। তাহলেই জলাবদ্ধতার একটা বড় অংশ থেকে নগরবাসীকে রেহাই দিতে পারব।"
দখল উচ্ছেদ করে খাল খননের জন্য প্রকল্প নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, একনেক সভায় প্রকল্পের অনুমোদন হলে রিটেনশন পন্ডের পাশে কিভাবে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করতে পারি সেই পরিকল্পনা হচ্ছে। এবার সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করব।“
এ সময় স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম, উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মুহা. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এম সাইদুর রহমান, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শরীফ উদ্দীন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সিভিল সার্কেল খন্দকার মাহাবুব আলম উপস্থিত ছিলেন।