করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান মারা গেছেন।
Published : 14 Apr 2021, 03:02 PM
বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির সচিব এ এইচ এম লোকমান।
বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি দীর্ঘদিন একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন।
সাবেক শিক্ষক শামসুজ্জামান খান স্বাধীনতা পদক পদক ও একুশে পদকে ভূষিত। বাংলা একাডেমি পুরস্কারও রয়েছে তার ঝুলিতে।
লোকমান বলেন, শামসুজ্জামান খানের দাফনের বিষয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
শামসুজ্জামান স্ত্রী ও তিন মেয়ে রেখে গেছেন।
এপ্রিলের শুরুতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন অধ্যাপক শামসুজ্জামান। তার স্ত্রী আক্রান্ত হন। দুজনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ছিলেন।
স্ত্রীর স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতি হলেও শামসুজ্জামানের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় রোববার তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়।
অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শোক জানিয়েছেন।
অধ্যাপক শামসুজ্জামানের জন্ম ১৯৪০ সালের ২৯ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার চারিগ্রামে।
ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের থেকে শিক্ষাজীবন শেষে শিক্ষকতা দিয়ে তার কর্মজীবনের সূচনা। বিভিন্ন সময় মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজ, ঢাকা জগন্নাথ কলেজ, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্বিবিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্বিবিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন তিনি।
২০০৯ সালে তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হন। এরপর তিন মেয়াদে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি ওই পদে ছিলেন। পরে তাকে একাডেমির সভাপতি করা হয়।
তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালকের দায়িত্বেও ছিলেন।
তিনি ইসলামী বিশ্বিবিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন।
লোকশিল্প গবেষক শামসুজ্জামানের রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফোকলোর চর্চা, বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রচিন্তা ও বর্তমান বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, মুক্তবুদ্ধি, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমকাল, বাঙালির বহুত্ববাদী লোকমনীষা, মীর মশাররফ হোসেন : নতুন তথ্যে নতুন ভাষ্যে, সৃজনভুবনের আলোকিত মানুষেরা, রঙ্গরসের গল্পসমগ্র, কিশোর রচনাসমগ্র, বাংলাদেশের উৎসব, বাংলা সন ও পঞ্জিকা, ফোকলোরচিন্তা ইত্যাদি।
বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা শিরোনামে ৬৪ খণ্ডে ৬৪ জেলার লোকজ সংস্কৃতির সংগ্রহশালা সম্পাদনা এবং ১১৪ খণ্ডে বাংলাদেশের ফোকলোর সংগ্রহমালা সম্পাদনা করেন তিনি।
সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০১ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। ২০০৯ সালে একুশ পদক পাওয়ার পর ২০১৭ সালে তিনি সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার অর্জন করেন।
সভাপতির মৃত্যুতে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানও শোক প্রকাশ করেছেন।