বায়ু দূষণ করোনাভাইরাসে মৃত্যুঝুঁকি বাড়াতে পারে- বিশেষজ্ঞদের এমন আশঙ্কার মধ্যে ঢাকার বায়ু দূষণ ঠেকাতে ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।
Published : 24 Nov 2020, 07:30 PM
এ সংক্রান্ত একটি বিচারাধীন রিটে সম্পূরক আবেদনের শুনানির পর মঙ্গলবার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দিয়ে
আগামী ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
ঢাকা ও আশেপাশের এলাকার বায়ু দূষণ রোধে চলতি বছর জানুয়ারিতে হাই কোর্ট ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছিল। ফেব্রুয়ারিতে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হলে বায়ু দূষণ কিছুটা কমেও ছিল।
মনজিল মোরসেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন আবার শীতকাল চলে এসেছে। আর শীতকালে বাতাসে ধুলো-বালির পরিমাণ এমনিতেই বেড়ে যায়। তাছাড়া সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এসেছে বায়ু দূষণ করোনাভাইরাসে মৃত্যু ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
“যে কারণে প্রকাশিত ওইসব প্রতিবেদন যুক্ত করে হাই কোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সম্পূরক আবেদন করেছিলাম। দুই দিন শুনানির পর আজ আদেশ দিয়েছে আদালত।”
ঢাকার বায়ু দূষণ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর-প্রতিবেদন যুক্ত করে গত বছর ২১ জানুয়ারি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) পক্ষে রিট আবেদনটি করা হয়।
ওই আবেদনের শুনানি শেষে আদালত রুলসহ আদেশ দেয়।
আদেশে বলা হয়, ঢাকা শহরে যারা বায়ু দূষণের কারণ সৃষ্টি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সপ্তাহে দুইবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে পরিবেশ অধিদপ্তরকে।
আদালত সেদিন বলে দেয়, রাজধানীর যেসব জায়গায় উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ চলছে, সেসব জায়গা ১৫ দিনের মধ্যে এমনভাবে ঘিরে ফেলতে হবে, যাতে শুকনো মৌসুমে ধুলো ছড়িয়ে বায়ু দূষণ বাড়তে না পারে।
পাশাপাশি ‘ধুলোবালি প্রবণ’ এলাকাগুলোতে দিনে দুই বার করে পানি ছিটাতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে বলা হয় সিটি করপোরেশনকে।
ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ রোধে প্রশাসনের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।
বন ও পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিচালক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র, নির্বাহী কর্মকর্তা, ডিএমপি কমিশনার, রাজউকের চেয়ারম্যানসহ ১১ বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
সে আবেদনের শুনানির পর গত বছর ২৬ নভেম্বর আদালত ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকার বায়ু দূষণ কমাতে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের জন্য পরিবেশ সচিবের নেতৃত্বে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়।
দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিআরটিএ ও ডেসকোর প্রতিনিধিকে কমিটিতে রাখতে বলা হয় এবং এই কমিটিকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
এছাড়া প্রয়োজনে অতিরিক্ত লোকবল নিয়োগ করে রাস্তা, ফুটপাত, ফ্লাইওভার, ওয়াকওভারের যেসব জায়গায় ধুলাবালি, ময়লা বা বর্জ্য-আবর্জনা জমিয়ে রাখা হয় বা জমে থাকে সেসব ধুলাবালি, ময়লা, বর্জ্য-আবর্জনা সাত দিনের মধ্যে সিটি করপোরেশনকে অপসারণ করতে বলে উচ্চ আদালত।
তারই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরএইচআরপিবি’র আরেকটি সম্পূরক আবদন করে। সে আবেদনে ১২ নির্দেশনা চাওয়া হলেও হাই কোর্ট চলতি বছর ১৩ জানুয়ারি ৯ দফা নির্দেশনা দিয়ে আদেশ দেয়।
হাই কোর্টের ৯ দফা নির্দেশনা
>> ঢাকা শহরে মাটি, বালি, বর্জ্য ও মালামাল ঢেকে পরিবহন করতে হবে।
>> চারপাশ ঘিরে উন্নয়ন বা নির্মাণ কাজ করতে হবে। মাটি, বালি, সিমেন্ট, পাথরসহ নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে রাখতে হবে।
>> ঢাকার রাস্তায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সকাল-বিকাল পানি ছিটাতে হবে সিটি করপোরেশনকে।
>> রাস্তা, কালভার্ট, কার্পেটিং, খোড়াখুড়ি কাজ অইন ও দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী নিশ্চিত করতে হবে।
>> যেসব যানবাহন নির্ধারিত মাত্রার বেশি কালো ধোঁয়া ছড়ায় সেগুলো জব্দ করতে হবে।
>> সড়ক পরিবহন আইনের বিধান অনুযায়ী প্রত্যেক যানবাহনের ‘ইকোনোমিক লাইফ’ নির্ধারণ করতে হবে। যেসব পরিবহনের ‘ইকোনোমিক লাইফ’র মেয়াদ পেরিয়ে গেছে, সেসব যানবাহন নিষিদ্ধ করতে হবে।
>> ঢাকা ও তার আশেপাশের এলাকায় অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে হবে।
>> পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া টায়ার পোড়ানো বা ব্যাটারি রিসাইক্লিং বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
>> শপিং মল, বাজার, দোকানের প্রতিদিনের বর্জ্য ব্যাগ ভরে নির্ধারিত জায়গায় রাখতে হবে এবং সেগুলো অপসারণে সিটি করপোরেশনকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এছাড়া ঢাকার বায়ুমান উন্নয়নে পরিবেশ অদিদপ্তর কী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং অধিদপ্তরে জনবল নিয়োগের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে বলা হয়।
এর মধ্যে করোনাভাইরাসে বায়ু দূষণ মৃত্যু ঝুঁকি বাড়াতে পারে, গণমাধ্যমে এমন প্রতিবেদন দেখে গত ১৫ নভেম্বর এইচআরপিবি’র পক্ষ থেকে আরেক সম্পূরক আবেদন করা হয়।
সে আবেদনের শুনানির পরই মঙ্গলবার ৯ দফা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ জানতে চেয়ে আদেশ দিল উচ্চ আদালত।