করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে দেশের ৩৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১ হাজার ৫০১ জন ‘অস্বচ্ছল’ শিক্ষার্থীকে স্মার্টফোন কেনার জন্য ঋণ দেবে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
Published : 04 Nov 2020, 06:04 PM
একজন শিক্ষার্থী বিনা সুদে সর্বোচ্চ আট হাজার টাকা ঋণ পাবেন। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর কিংবা অধ্যয়নকালীন চারটি সমান কিস্তিতে বা এককালীন ওই ঋণের টাকা তারা পরিশোধ করতে পারবেন।
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহের সভাপতিত্বে বুধবার এক ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সেখানে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের গঠিত ‘সফটলোন অনুমোদন কমিট’র সুপারিশের আলোকে ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ওই ঋণের টাকা দেওয়া হবে।
এই অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বার্ষিক বরাদ্দের বিপরীতে অগ্রিম হিসেবে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হবে।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর গত ১৭ মার্চ থেকে অন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও বন্ধ রয়েছে।
সঙ্কট দীর্ঘায়িত হতে থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করলেও শিক্ষার্থীদের অনেকের ডিভাইস নিয়ে সঙ্কট, ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ, প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেটওয়ার্ক সমস্যাসহ সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে অনলাইন ক্লাসে সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
এই প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দাবিতে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করার উদ্যোগ নেয় ইউজিসি।
যেসব শিক্ষার্থীর উপযুক্ত ডিভাইস নেই, আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, তাদের তালিকা চেয়ে গত ৯ আগস্ট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের চিঠি দেওয়া হয় কমিশনের পক্ষ থেকে। এ ধারাবাহিকতকায় ৩৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোট ৪১ হাজার ৫০১ জন শিক্ষার্থীর তালিকা দেওয়া হয়।
এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৫৫৬ জন (১৯.৮৯ শতাংশ) এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সর্বনিম্ন ১৯৭ জনের (৩.৩৬ শতাংশ) তালিক ইউজিসিতে দিয়েছে।
দেশে বর্তমানে ৪৬টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই ঋণ সুবিধার বাইরে রয়েছে বলে ইউজিসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ সভায় বলেন, “এই উদ্যোগের মাধ্যমে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীরা বর্তমান সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে। এটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্যোগে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।”
‘স্বল্পমূ্ল্যে’ ইন্টারনেট প্যাক
অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে সরকারি-বেসরকারি সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বল্পমূ্ল্যে ইন্টারনেট ডেটা প্যাকেজ দেওয়ারও উদ্যোগ নিয়েছে ইউজিসি। সেই লক্ষ্যে মোবাইল অপারেটরগুলোর সঙ্গে ইতোমধ্যে চুক্তিও হয়েছে বলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম জানিয়েছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ইন্টারনেট প্যাকেজ সচ্ছল-অসচ্ছল শিক্ষার্থী সবার জন্যই। পাবলিক ও প্রাইভেট সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই এ সুবিধা পাবে। এই মাস থেকেই শিক্ষার্থীরা এটা পেয়ে যাবে। এই অফারটা হবে কাসটোমাইজড। এসব ডাটা শুধু জুম ক্লাসের জন্য ব্যবহার করতে পারবে; ফেইসবুক-ইউটিউব চালিয়ে খরচ করা যাবে না।”
অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম জানান, ইউজিসি শুরুতে টেলিটকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু সব জায়গায় টেলিটকের নেটওয়ার্ক ঠিকভাবে পাওয়া যায় না বলে পরে রবি, গ্রামীণফোন ও বাংলালিংকের সঙ্গেও আলোচনা হয়।
“৫ নভেম্বরের মধ্যে বিষয়টি চূড়ান্ত করতে একটা ডেট দেওয়া হয়েছে। আমাকে রবি যেটা বলেছে, ২২০ টাকায় এক মাস মেয়াদের ৩০ জিবি এবং ১১০ টাকায় ১৫ জিবি ডেটা তারা দেবে। গ্রামীণফোন ও বাংলালিংকও একটা অফার দেবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তা শিক্ষার্থীদের দেওয়ার ব্যবস্থা হবে।”
অন্যদের মধ্যে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক মো. সাজ্জাদ হোসেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর, অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ, অধ্যাপক মো. আবু তাহের, ইউজিসি সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. ফেরদৌস জামান, জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার বিভাগের পরিচালক ড. শামসুল আরেফিন এবং অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. শাহ আলম সভায় অংশ নেন।