সরকার আলুর দাম নির্ধারণ করে দিলেও হিমাগার মালিক ও আড়ৎদারদের দৌরাত্ম্যে আলুর দাম কমে না আসায় চটেছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।
Published : 21 Oct 2020, 02:26 PM
বুধবার দুপুরে এগ্রিকালচার রিপোর্টার্স ফোরাম-এআরএফ আয়োজিত এক ওয়েবিনারে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, “আলুর দাম ৩৫ টাকা.. এটা অনেক দাম। বাস্তবতা বিবেচনা করে আমরা আরও পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ৩৫ টাকা করে দিলাম। কিন্তু আলুর দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা… এটা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
ব্যবসায়ী, আড়ৎদারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা মুনাফা করেন, মুনাফা করার জন্যই ব্যবসা করছেন। কিন্তু এ সুযোগে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার চিন্তা করবেন না। মানুষের প্রতি কর্তব্যবোধ থেকে আপনাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, আপনারা সরকারের নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করুন।”
বাজার স্থিতিশীল রাখতে খুচরা বাজারে এক কেজি আলুর দাম ৩০ টাকায় বেঁধে দিয়ে তা কার্যকর করতে না পেরে পরে ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার।
এছাড়া কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ২৭ টাকা এবং পাইকারিতে ৩০ টাকা কেজি বেঁধে দিয়ে মঙ্গলবার দাম পুনঃনির্ধারণ করে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।
বাজারে আলুর দাম অস্বাভবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার পর গত ৭ অক্টোবর কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ২৩ টাকা, পাইকারীতে ২৫ টাকা এবং খুচরায় দাম ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু সেই দামে কেউ আলু বিক্রি করছিল না। এক কেজি আলু কিনতে খরচ হচ্ছিল ৫০ টাকা।
নতুন দর বেঁধে দিয়ে সেই দামে যাতে সব পর্যায়ে আলু বিক্রি হয় তা নিশ্চিত করতে ডেপুটি কমিশনারদের (ডিসি) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ওয়েবিনারে জানান, এ বছর করোনাভাইরাস মহামারীতে হতদরিদ্র মানুষ ও রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দ করা ত্রাণে বিপুল পরিমাণ আলু বিতরণ করায় ও বন্যার কারণে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আলু উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।
গত বছরে শুরুর দিকে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছিলেন, সাধারণ মানুষের ‘ভিটামিন-এ’র ঘাটতি পূরণে সরকার শিগগিরই ধানের নতুন জাত ‘গোল্ডেন রাইস’ উন্মুক্ত করবে।
দেড় বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও সেই ধানটি এখনও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পায়নি বলে জানান কৃষিমন্ত্রী।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “জেনেটিক্যালি মডিফাইড এই ধানটি নিয়ে বেশ বিতর্ক ও সমালোচনা রয়েছে। এই ধান মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকারক কিনা, ধান চাষের ফলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে কিনা, এ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর এখনও আমাদের ছাড়পত্র দেয়নি। আমরা চেষ্টা করছি।”
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিতে ডিম, দুধ, মাছ, মাংসের উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর রাখছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রী বলেন, “আমাদের এখানে চাল মোটামুটি ভালো উৎপাদন হয়। আমরা বেশি চাল খেতাম, চাল থেকে প্রোটিন আসত। চালই আমাদের মূল খাবার। আগে আমরা ৪২৫-৪৩০ গ্রাম চাল আমরা খেতাম। এটা কমে গিয়ে এখন ৩৬০-৩৭০ গ্রাম খাবার আমরা খাই।
“তার মানে আমরা চাল কমিয়ে পুষ্টিজাতীয় খাবার যেমন ডিম, দুধ, মাছ, মাংস এগুলো… এগুলোর উৎপাদন যদি বাড়াতে পারি, যদি তা ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই পুষ্টির লক্ষ্য আমাদের অর্জিত হবে।”
সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাকের কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, করোনাভাইরাসে কারণে এবার এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হবে কিনা।
জবাবে তিনি বিভিন্ন পরিসংখ্যানের তথ্য তুলে ধরেন বলেন, “পৃথিবীর ৬৬টি দেশের মধ্যে জরিপ শেষে দ্য ইকোনমিস্টের গোয়েন্দারা বলছে, পৃথিবীর যে ৯টি দেশের অর্থনীতি এখন ভালো আছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ আছে।
“আরেকটা রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশের ইকোনমির পজিটিভ গ্রোথ আছে, যেখানে ভারতের ইকোনমি ২৪ শতাংশের বেশি নেমে গেছে। হাঙ্গার ইনডেস্কে আমরা ৭৪তম স্থানে এসেছি। পাকিস্তান, ৮৮, ইন্ডিয়া ৯৪তম অবস্থানে আছে।। সুতরাং এ কথা বলার এখনই সময় আসেনি যে কোভিডের কারণে এসডিজি ব্যাহত হবে কিনা।”
এগ্রিকালচারাল রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মো. আশরাফ আলির সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি বিষয়ক) জুয়েনা আজিজ, সাবেক কৃষিসচিব আনোয়ার ফারুক, বিএডিসির চেয়ারম্যান মো. সায়েদুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুল মুঈদ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক নাজিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এআরএফের যুগ্ম-সম্পাদক ফয়জুল সিদ্দিকি এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুল হাসান।
কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরি ও সংযোজনে সহযোগিতার আশ্বাস ভারতের
ভারতের কৃষি যন্ত্রপাতি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে বাংলাদেশে তাদের কারখানা স্থাপন করে স্থানীয়ভাবে কৃষি এবং খুচরা যন্ত্রপাতি তৈরিতে বিনিয়োগ করে সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী।
বাংলাদেশে নবনিযুক্ত ভারতের দূত বুধবার কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে সচিবালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সাক্ষাতে দুই দেশের কৃষি, কৃষি যন্ত্রপাতি, কৃষি প্রসেসিং, বীজ প্রযুক্তি এবং ডেইরি প্রসেসিং নিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়। এসময় কৃষি সচিব মেসবাহুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরির পাশাপাশি বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের প্রশিক্ষণ, বীজ প্রযুক্তি, বিটি কটন, ভুট্টা, কাজুবাদামসহ উন্নতজাতের জাত ও চারা সরবরাহ, মিল্ক প্রসেসিং, এগ্রো প্রসেসিং খাতেও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন হাই কমিশনার।
বৈঠকে তিনি জানান, মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে বন্যা এবং অতিবৃষ্টির কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি, দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
তবে সম্প্রতি বাংলাদেশে ২০ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে ভারত। আবহাওয়ার উন্নতি হলে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি পরিমাণ আরও বাড়বে বলেও তিনি জানান।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “বাংলাদেশের কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিকীকরণের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি সরকার প্রায় ৩০০০ কোটি টাকার কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ প্রচুর কৃষি যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে ভারতের প্রতিষ্ঠানগুলোর বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনেক সুযোগ রয়েছে।
“কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাতে ও বাজারজাতে বাংলাদেশ কিছুটা পিছিয়ে আছে। আর ভারত এক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে আছে। সেজন্য, এসব ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
আরও খবর