গত কয়েক বছর ধরে খুচরা পর্যায়ে ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া আলুর দাম এখন রাজধানীতে ৫০ টাকা: স্থানভেদে ৫৫ টাকা।
বুধবার রাজধানীর মিরপুর বড়বাগ, পীরেরবাগ, শাহ আলী মার্কেট ঘুরে খুচরায় প্রতি কেজি আলু ৫০-৫২ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
অথচ সরকারি কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে, গত মওসুমে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে ৮ টাকা ৩২ পয়সা। হিমাগারে আলু সংরক্ষণ ও বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীদের মুনাফার পর পণ্যটির দাম পাইকারি পর্যায়ে ২৫ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৩০ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়।
বড়বাগ বাজারে সোহাইল আনোয়ার নামের একজন ক্রেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একেক সময় একেটা পণ্য নিয়ে এ ধরনের কারসাজি শুরু হয়। আলু দেশে উৎপাদিত পণ্য হওয়ায় এভাবে দাম বেড়ে যাওয়ার কোনো যুক্তিই নেই। নিশ্চিয়ই এখানে বড় কোনো সিন্ডিকেট কাজ করছে, খোঁজ নিলে বের হবে।
“এখন চাল, আলু, পেঁয়াজ সবজি থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্যের দামই বাড়তি। আর সাধারণ মানুষের আয়-ইনকামের অবস্থা যে ভালো না তা সবারই জানা। তাহলে মানুষ কয় দিক সামলাবে,” ক্ষোভের সুরে বলেন সোহাইল।
তারেক মোহাম্মদ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, “নিম্ন আয়ের মানুষজন আলু, ডাল, শাক-সবজির ওপর বেশি নির্ভরশীল। তারা মাছ-মাংস খুব কমই কেনে। এখন এসব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদেরকে নাকাল হতে হচ্ছে।”
দশ দিন আগেও প্রতি কেজি আলুর খুচরা দাম ছিল ৩০-৩২ টাকা। এক সপ্তাহ পর সেই দাম উঠে যায় ৪০ টাকায়, এরপর পেরিয়ে যায় ৫০ টাকার ঘর।
শাহ আলী মার্কেটের মাহির ট্রেডার্স নামের একটি গুদামের পরিচালক সেলিম বলেন, “জেলা শহর থেকে আলু নিয়ে আসা ব্যাপারীরাই দাম নির্ধারণে অনেকটা ভূমিকা রাখেন। আড়ৎগুলোর কমিশন নেওয়া ছাড়া কোনো কাজ নেই।
“আলুর দাম বেড়ে যাওয়াতে আমাদেরও সমস্যা। বেচাবিক্রি কমে গেছে। কিন্তু দাম নির্ধারণে আমাদের তো কোনো হাত নেই, তারা যেই দাম বলে দেন সেই দামে বেচি।”
এই বাজারের আরেকজন আড়ৎদার জানালেন, এবার মহামারীতে ব্যাপকহারে যেসব ত্রাণ বিতরণ হয়ে, তার অন্যতম উপাদন ছিল আলু। ফলে এবার আলু একটু বেশি খরচ হওয়ায় মওসুমের শেষ দিকে এসে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে মজুতদারেরা।
ডিসেম্বরে নতুন আলু আসার আগে এই দাম কমার কোনো লক্ষণ দেখছেন না তিনি।
দাম বেঁধে দিয়েও কাজ হচ্ছে না
আলুর দামে অস্থিরতা ঠেকাতে গত ৭ অক্টোবর পণ্যটির দাম বিশ্লেষণ ও সর্বোচ্চ মূল্যের সুপারিশসহ জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি দেয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।
আলুর সর্বোচ্চ মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া ওই চিঠির পরও পণ্যটির দাম কেজিতে অন্তত ১০ টাকা করে বেড়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে গত মওসুমে এক কোটি ৯ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে, যদিও পণ্যটির বার্ষিক চাহিদা ৭৭ লাখ টন। সেই হিসাবে ৩১ লাখ টন আলু বিদেশে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত থাকার কথা ।
ব্যয় বিশ্লেষণ করে চিঠিতে বলা হয়, মওসুমে হিমাগারে সংরক্ষণের সময় প্রতি কেজি আলুর মূল্য ছিল সর্বোচ্চ ১৪ টাকা। প্রতি কেজিতে হিমাগার ভাড়া বাবদ তিন টাকা ৬৬ পয়সা, বাছাইতে ৪৬ পয়সা, ওয়েট লস ৮৮ পয়সা, মূলধনের সুদ ও অন্যান্য খরচ বাবদ ২ টাকা ব্যয় হয়। অর্থাৎ এক কেজি আলুর সংরক্ষণে সর্বোচ্চ ২১ টাকা খরচ পড়ে।
চিঠিতে বলা হয়, হিমাগার পর্যায়ে বিক্রি মূল্যের ওপর সাধারণত ২-৫ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ৪-৫ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ১০-১৫ শতাংশ লভ্যাংশ যোগ করে ভোক্তার কাছে আলু বিক্রি করা যুক্তিযুক্ত।
হিমাগার পর্যায় থেকে প্রতি কেজি আলু ২৩ টাকায় বিক্রি করলে সংরক্ষণকারীর ২ টাকা মুনাফা হয়। আড়ৎদার, খাজনা ও লেবার খরচ বাবদ ৭৬ পয়সা খরচ হয়। এতে মূল্য দাঁড়ায় ২৩ টাকা ৭৭ পয়সা। সঙ্গে মুনাফা যোগ করে সর্বোচ্চ ২৫ টাকা।
হিমাগার পর্যায় থেকে প্রতি কেজি আলুর মূল্য ২৩ টাকা, পাইকারি/আড়তে এর মূল্য ২৫ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩০ টাকা হওয়া উচিত বলে জেলা প্রশাসকদেরকে কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে।