নিক্সন চৌধুরীকে আট সপ্তাহের আগাম জামিন

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের মামলায় হাই কোর্ট থেকে আগাম জামিন পেয়েছেন ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ মুজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2020, 08:51 AM
Updated : 20 Oct 2020, 10:31 AM

বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারোয়ার কাজলের বেঞ্চ মঙ্গলবার শর্তসাপেক্ষে তাকে আট সপ্তাহের জামিন দেন।

আদালাতে নিক্সন চৌধুরীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ড. শাহদীন মালিক ও আইনজীবী মনজুর আলম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফেরদৌসি রূপা।

আদেশে আদালত বলেছে, মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে সাক্ষীদের প্রভাবিত করা যাবে না; স্থানীয় প্রশাসনকে কোনো ভয়ভীতি দেখানো যাবে না এবং তদন্ত কর্মকর্তাকে জামিন আবেদনকারী (নিক্সন চৌধুরী) সব ধরনের সহযোগিতা করবেন।

পরে শাহদীন মালিক সাংবাদিকদের বলেন, আদালত আট সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছে। এর জন্য যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে, সেগুলি সব মামলায় সবসময়ই থাকে।

জামিনের পক্ষে কি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মামলা এজাহারে একটি কল রেকর্ডিংয়ের কথা বলা হয়েছে। আইনগতভাবে দেখিয়েছি যে, এইভাবে কারো টেলিফোন কনভারসেশন রেকর্ড করার ক্ষমতা কারো নাই। তাছাড়া এটা রেকর্ডিং সাক্ষ্য হিসেবে আসতেই পারে না। ”

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১ এর ৭১(ক) ধারা অনুযায়ী কারো কল রেকর্ড করতে হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর স্বাক্ষরে অনুমোদন লাগে।

শাহদীন বলেন, “এছাড়া এজাহারে বলা হয়েছে, মিছিল, মিটিং, শোডাউন করে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। আসামি তো একজন। তো একজন আসামি মিছিল, মিটিং, শোডাউন করে কেমন করে আচরণবিধি লঙ্ঘন করবেন!

“তাছাড়া হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ ইতোপূর্বে বলেছেন যে, কারো অজান্তে কল রেকর্ড করা বেআইনি, ফাঁস হওয়া বেআইনি। আর সংবিধানের ৪৩ ধারায় আমার যোগাযোগের গোপনীয়তা রক্ষার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। মূলত এই ছিল জামিন আবেদনের পক্ষে আমাদের যুক্তি।”

শুনানিতে নিক্সনের জামিনের বিরোধিতা করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, একজন সংসদ সদস্যের কাছে এমন আচরণ প্রত্যাশিত না। আচরণবিধি লঙ্ঘন, করে, আইন লঙ্ঘন করে তিনি সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদকেও লঙ্ঘন করেছেন।

এর আগে মঙ্গলবার সকালে আগাম জামিনের আবেদন শুনানির জন্য হাই কোর্টে উপস্থিত হন নিক্সন চৌধুরী। বেলা পৌনে ২টায় জামিন আবেদনের শুনানি হয়।

ফরিদপুরের জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা নওয়াবুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার চরভদ্রাসন থানায় সাংসদ নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। এরপর সেই মামলায় আগাম জামিনের জন্য গত ১৮ অক্টোবর হাই কোর্টে আবেদন করেন নিক্সন চৌধুরী।

মামলার এজাহারে বলা হয়ে, গত ১০ অক্টোবর চরভদ্রাসন উপজেলার উপ নির্বাচনে কেন্দ্রভিত্তিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত করায় জেলা প্রশাসক অতুল সরকারকে ফোন করে কৈফিয়ত দাবি করেন সাংসদ নিক্সন। তার সমর্থিত প্রার্থী পরাজিত হলে মহাসড়ক অবরোধ করার ‘হুমকি’ দেন এবং ‘অশোভন আচরণ’ করেন।

একইসাথে নির্বাচনের দিন একটি ভোট কেন্দ্রের বুথের সামনে জাল ভোট দেওয়া ও ধূমপান করার সময় একজন পোলিং এজেন্টকে আটকের পর চরভদ্রাসনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ভাঙ্গার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও কর্তব্যরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে সাংসদ ‘অত্যন্ত অশালীন ভাষায় গালিগালাজ, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং হুমকি’ দেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।

একজন সংসদ সদস্য হয়েও নির্বাচনী এলাকায় উপস্থিত থেকে নির্বাচনের প্রচারে অংশগ্রহণ করে এবং দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের ‘গালিগালাজ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে’ নিক্সন চৌধুরী নির্বাচনী বিধিমালা লঙ্ঘন করেছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

ভোটের দিন সকালে সাংসদ নিক্সন চরভদ্রাসনের ইউএনওকে ফোন করে হুমকি-ধমকি দেন এবং অপর একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে গালিগালাজ করে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ ওঠে। তার ওই টেলিফোন আলাপের অডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় তুমুল সমালোচনা।

অবশ্য সাংসদ মুজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সন ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। তার দাবি, হুমকি দেওয়ার যে অডিও ফেইসবুকে ভাইরাল হয়েছে, তা ‘সুপার এডিটেড’।

আরও পড়ুন