ফরিদপুরে প্রশাসনকে এমপি নিক্সনের হুমকি-ধমকি

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদ উপ-নির্বাচন পরবর্তী এক সমাবেশে জেলা প্রশাসক ও এক সহকারী কমিশনারকে হুমকি-ধমকি দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মুজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সন।

শেখ মফিজুর রহমান শিপন ফরিদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2020, 05:21 PM
Updated : 11 Oct 2020, 05:39 PM

চরভদ্রাসন উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে শনিবার সন্ধ্যায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

ওইদিনই চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে মোট সাত জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে নির্বাচনের আগে দুই প্রার্থী সরে দাঁড়ান।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. কাওসার হোসেন নৌকা প্রতীক নিয়ে ১৬ হাজার ৫২৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কে এম ওবায়দুল বারী পেয়েছেন ৫ হাজার ৩৪৬ ভোট।

নির্বাচনের চার দিন আগে হঠাৎ করে কাওসারের পক্ষে মাঠে নামেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরীর সমর্থকরা।

সমাবেশে নিক্সন বলেন, “প্রশাসনের মধ্যে লুকাইয়া থাকা ওই জেলা প্রশাসক এ নির্বাচনে ১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে নৌকার কর্মীদের অ্যারেস্ট করছে, পিটাইছে ওই জেলা প্রশাসক।”

“ওই জেলা প্রশাসক একজন রাজাকার” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তা না হলে মাত্র চারটি ইউনিয়নে ১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে আমার নেতা-কর্মীদের যেখানে পাইছে সেখানে আমার নেতাকর্মীদের উপর হামলা করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমি জেলা প্রশাসনকে সাবধান করব; আপনি ফরিদপুরে দেখেছেন অনেক বড় নেতার পতন হইছে, ওই বরকত-রুবেলের যত অন্যায়, যত দুর্নীতি তার সাথে আপনার জেলা প্রশাসনের লোক জড়িত ছিল। বরকত রুবেলের বিচারে হলে ওই জেলা প্রশাসকের বিচার হবে। কারন ওই দিপু খাঁর বালির ব্যবসার ভাগ ওই জেলা প্রশাসক পায়।”

জেলা প্রশাসকের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনি যত বড় উপদেষ্টার নাতি হোন না কেন আপনি নিক্সন চৌধুরীর সাথে চোখ রাঙাইয়া কথা বলবেন না। আমি যদি আমার জনগণ নিয়া আপনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামি, আমি যদি নেতা কর্মীদের নিয়ে নামি তবে আপনি এক মিনিট দম নেওয়ার সুযোগ পাবেন না।”

বক্তব্যের এই পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে নানা শ্লোগান দেন সমাবেশে থাকা সমর্থকরা।

নিক্সন চৌধুরী আরও বলেন, “উনি এক উপদেষ্টার ভয় দেখান, উনি মনে করেন ওই উপদেষ্টাই ওনার ক্ষমতা। আরে এমন কত উপদেষ্টা দেখলাম মিয়া, জাফরউল্যাহ কাজীরই বেল নাই, আর আপনি উপদেষ্টার ভয় দেখান। সরকারি চাকরি করেন বিএনপি নেতাদের চেয়ারম্যান বানানোর জন্য না। আমরা এর বিচার অবশ্যই করব এবং আমরা এর বিচার চাই।”

চরভদ্রাসন সহকারী কমিশনারকে গালাগাল

নির্বাচনের দিন চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার জেসমিন সুলতানার উদ্দেশেও অশালীন ভাষায় গালাগাল দেন।

চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত) জেসমিন সুলতানা বলেন, “বুথের ভিতর সিগারেট খাওয়া ও জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা করায় সাংসদের লোককে আটক করা হয়। সাংসদ ফোনে আমাকে হুমকি-ধামকি দিলে আটকৃকতকে ছেড়ে দেওয়া হয়।”

ইউএনওর ফোনে ওই সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত এই সহকারী কমিশনারের (ভূমি) উদ্দ্যেশে বলেন, “শুয়রের বাচ্চা, কুত্তার বাচ্ছা.... আমার লোকদের গাড়িতে উঠায়ছে ক্যান; এখনই ছাড়তে বলেন। ওর কত বড় সাহস শুয়ারের বাচ্চা, আমি চরভদ্রাসন আসতেছি, ওরে আমি দেখতেছি।”

এই উপ-নির্বাচনে ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্টেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, “নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী ম্যাজস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বেশি ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হলে নির্বাচনে কী সমস্যা হয় তা বোধগম্য নয়।”

সাংসদ মুজিবর রহমান নিক্সনের হুঁসিয়ারি বিষয়ে জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হরে তিনি বলেন, এ বিষয়টি তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।

ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসনটি ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনের রাজনীতির হিসাব নিক্সন ও জাফরউল্যা শিবিরকে ঘিরে আবর্তিত হয়।

গত বছরের ২৩ অক্টোবর চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মুসার মৃত্যুর হলে পদটি শূন্য হয়। গত ২৯ মার্চ এ উপ-নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ২৬ মার্চ ওই নির্বাচন স্থগিত করা হয়। পরে ১৩ সেপ্টেম্বরের এক প্রজ্ঞাপনে ১০ অক্টোবর নির্বাচন ভোট গ্রহণের দিন ধার্য করে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচনে মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই কাউসার হোসেন দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে এবং আনোয়ার আলী মোল্লা আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে নামেন।

নির্বাচনের দুদিন আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে নিক্সন–সমর্থিত প্রার্থী আনোয়ার আলী মোল্লা আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাউসারকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

পরদিন শুক্রবার নৌকার প্রার্থী কাউসার সোনার নৌকা নিয়ে নিক্সন চৌধুরীর ব্রাহ্মণপাড়ার বাসভবনে গিয়ে তার হাতে সোনার নৌকা তুলে তার পক্ষে অবস্থান নেন। ওইদিন বিকালে ভাঙ্গার আজিমনগর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামে এক যোগদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।