চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলার জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা নওয়াবুল ইসলাম বৃহস্পতিবার সকালে চরভদ্রাসন থানায় এ মামলা করেন বলে ওসি নাজনীন খানম জানান।
নওয়াবুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইসির নির্দেশনায় আমি বাদী হয়ে এ মামলা করেছি। আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে সাংসেদের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়েছে।”
ওই উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসক ও নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় গত কয়েক দিন ধরেই আলোচনা চলছে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরীকে নিয়ে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ যেমন তার বিচার দাবি করেছে, তেমনি বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনও এই সাংসদকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে বুধবার ঢাকার নির্বাচন ভবনে আইন-শৃঙ্খলা বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা ফরিদপুরের ওই সাংসদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত জানান।
নিক্সন চৌধুরী আচরণ বিধির বাইরে আর কোনো নির্বাচনী অপরাধ করেছেন কিনা, তা তদন্ত করে দেখতে একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি করার কথাও বলেন সিইসি।
রিটার্নিং কর্মকর্তা যে মামলা করেছেন, সেখানে ২০১৩ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা এবং ২০১৬ সালের উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
একইসাথে নির্বাচনের দিন একটি ভোট কেন্দ্রের বুথের সামনে জাল ভোট দেওয়া ও ধূমপান করার সময় একজন পোলিং এজেন্টকে আটকের পর চরভদ্রাসনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ভাঙ্গার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও কর্তব্যরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে সাংসদ ‘অত্যন্ত অশালীন ভাষায় গালিগালাজ, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং হুমকি’ দেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।
একজন সংসদ সদস্য হয়েও নির্বাচনী এলাকায় উপস্থিত থেকে নির্বাচনের প্রচারে অংশগ্রহণ করে এবং দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের ‘গালিগালাজ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে’ নিক্সন চৌধুরী নির্বাচনী বিধিমালা লঙ্ঘন করেছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
শনিবার ওই নির্বাচনে ৬ হাজার ৫২৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. কাওসার হোসেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কে এম ওবায়দুল বারী পান ৫ হাজার ৩৪৬ ভোট।
ভোটের পর সেদিন সন্ধ্যায় উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে স্বতন্ত্র সাংসদ নিক্সন চৌধুরী বলেন, “প্রশাসনের মধ্যে লুকাইয়া থাকা ওই জেলা প্রশাসক এ নির্বাচনে ১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে নৌকার কর্মীদের অ্যারেস্ট করছে, পিটাইছে ওই জেলা প্রশাসক।”
ভোটের দিন সকালেও সাংসদ নিক্সন চরভদ্রাসনের ইউএনওকে ফোন করে হুমকি-ধমকি দেন এবং অপর একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে গালিগালাজ করে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ ওঠে। তার ওই টেলিফোন আলাপের অডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় তুমুল সমালোচনা।
এরপর মঙ্গলবার বিকালে ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন মুজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সন। তিনি দাবি করেন, হুমকি দেওয়ার যে অডিও ফেইসবুকে ভাইরাল হয়েছে, তা ‘সুপার এডিটেড’।
আরও পড়ুন