শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যে নয়টি কৌশলগত ক্ষেত্র চিহ্নিত করে ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার।
Published : 14 Oct 2020, 10:48 PM
মঙ্গলবার ঢাকার শ্রম ভবনে জাতীয় শিশুশ্রম কল্যাণ পরিষদের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয় বলে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (রপ্তানিমুখী শিল্প অধিশাখা) মাহবুবা বিলকিস সভায় একটি ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানান, ২০১০ সালের জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতির আলোকে জাতীয় কর্মপরিকল্পনার আওতায় ওই নয়টি কৌশলগত ক্ষেত্র চিহ্নিত করে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে।
এর মধ্যে শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যে নীতি বাস্তবায়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের বিষয়টি দেখবে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ন্যাশনাল কমিশন টু রিভিউ দ্য ওয়ার্কিং অফ দ্য কনস্টিটিউশন।
শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টি দেখবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির উন্নয়নে কাজ করবে।
শিশুশ্রম রোধে সামাজিক সচেতনতা তৈরিতে কাজ করবে তথ্য মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশন।
কর্মসংস্থান ও শ্রম বাজারে শিশুশ্রম বন্ধের বিষয়টি দেখবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
আইন ও প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
শিশুশ্রম প্রতিরোধে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগ কাজ করবে।
শ্রমে নিযুক্ত শিশুদের সুরক্ষার দায়িত্ব থাকবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশনগুলোর ওপর।
এছাড়া শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং সরকারি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলো গবেষণা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে কাজ করবে।
সভায় উপস্থিত শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ কে এম মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাতীয় শিশুশ্রম নীতি অনুসারে শিশুশ্রমের কারণ অনুসন্ধান, এর পেছনে আর্থ সামাজিক কারণগুলো খোঁজা, শিশুর মৌলিক চাহিদা পূরণের ঘাটতি কোথায় তা নির্ণয় করতে সভা থেকে সুপারিশ এসেছে।
“পাশাপাশি শ্রমজীবী শিশুর সংজ্ঞা ও বয়স নির্ধারণ, আনুষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রে শিশু-কিশোরদের নিয়োগ বন্ধ করা, শিশু শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, তার কর্মপরিবেশ, শিশু শ্রমিকের কর্মঘণ্টা ও মজুরি নির্ধারণের বিষয়গুলো নিয়েও কাজ করার নির্দেশনা এসেছে।”
প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান সভায় বলেন, “শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া এবং শিশুশ্রমে নিযুক্ত হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে পারিবারিক অস্বচ্ছলতা। একটি শিশুরশ্রমে নিযুক্ত হওয়ার আর যে কারণগুলো রয়েছে, সঠিকভাবে সেগুলো চিহ্নিত করতে হবে, তাহলে এ সমস্যার সমাধান সহজ হবে।”
গত জুনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ইউনিসেফ বলেছে, দুই দশকের চেষ্টায় বিশ্বে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ৯ কোটি ৪০ লাখ কমিয়ে আনার যে সফলতা ও অর্জন তা কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ঝুঁকির মুখে পড়েছে ।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারী মধ্যেই শিশুশ্রমে থাকা শিশুদের হয়ত আরো বেশি কর্মঘণ্টা কাজ করতে হবে বা আরও বাজে পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। তাদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাও মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট-এএসডি সম্প্রতি ঢাকায় ১৯৪ জন শ্রমজীবী শিশুর ওপর একটি জরিপ চালিয়েছে।
মহামারীকালে রাজধানীর কর্মজীবী শিশুদের ৮৬ দশমিক ৬ শতাংশ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উঠে এসেছে সেই জরিপে।
ফলে শিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া এবং বাল্যবিবাহের হারের সঙ্গে শিশু নির্যাতনও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে এএসডি।
জরিপে অংশ নেওয়া শিশুদের ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ জানিয়েছে, মহামারী শুরু হওয়ার পর তারা কাজ হারিয়েছে। আয় রোজগার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পেশা পরিবর্তন করেছে ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ শ্রমজীবী শিশু। তাদের একটি অংশ ভিক্ষাবৃত্তিতেও জড়িয়ে পড়েছে।