মহামারীতে ঢাকার ৮৬.৬% শ্রমজীবি শিশু ক্ষতিগ্রস্ত: জরিপ

করোনাভাইরাস মহামারীকালে রাজধানীর কর্মজীবী শিশুদের ৮৬ দশমিক ৬ শতাংশ শ্রমজীবি শিশু আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উঠে এসেছে এক জরিপে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 July 2020, 12:55 PM
Updated : 20 July 2020, 12:55 PM

ফলে শিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া ও বাল্যবিবাহের হারের সঙ্গে শিশু নির্যাতন বাড়বে আশঙ্কা করা হয়েছে।

ঢাকায় ১৯৪ জন শ্রমজীবি শিশুর উপর পরিচালিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট-এএসডির এই জরিপ সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে।

জরিপে অংশ নেওয়া শিশুদের ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস শুরু হবার পর থেকে কাজ হারিয়েছে; মহামারীকালে তাদের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে কিংবা ক্রেতা না থাকায় তাদের পণ্যের বিক্রি কমে গেছে।

আয় রোজগার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পেশা পরিবর্তন করেছে ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ শিশু। এদের মধ্যে অনেকে ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়েছে, যা ঢাকা শহরে দৃশ্যমান।

করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর আগে নগরে শিশুদের ৫৭ দশমিক ২ ভাগের মাসিক আয় ছিল ১-৩ হাজার টাকা। করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পরে সে সংখ্যাটি ৪৭ দশমিক ৭ ভাগে নেমে এসেছে।

আবার ২১ দশমিক ৬ শতাংশ যারা ৩-৪ হাজার টাকা মাসে আয় করত তা নেমে এসেছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশে।

শতকরা ৩০ দশমিক ৯ ভাগ শিশু বলেছে তাদের আয়ের উপর তাদের পরিবার নির্ভরশীল।

জরিপে অংশ নেওয়া শ্রমজীবী শিশুদের ২২ দশমিক ৮ ভাগ জানিয়েছে, তারা কাজে যাবার সময় মাস্ক ব্যবহার করে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে ৭৮ দশমিক ৯ ভাগ শিশু বলেছে, তারা কাজ থেকে ফিরে এসে সাবান দিয়ে হাত ধোয় এবং শতকরা ২০ ভাগ বলেছে তারা গোসল করে।

জরিপে অংশ নেওয়া ৩২ শতাংশ শিশু বলেছে,করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পরে তারা কোনো সরকারি বা বেসরকারি সাহায্য-সহযোগিতা পায়নি।

বাংলাদেশ সরকার ২০০৬ সালে বাংলাদেশ শ্রম আইন প্রণয়ন করেছে, যা ২০১৩ সালে সংশোধন করা হয়।

শ্রম আইনে ১৪ বছরের নিচে শিশু শ্রমকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শ্রম আইনে বলা হয়েছে, ১৪ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ নয় এমন কাজ করতে পারবে। ৩৮টি সেক্টরকে শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে।

সরকার প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কোনো শিশু শ্রমিক না থাকার কথা দাবি করলেও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত শিশুদের শ্রম থেকে ফেরানোকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ইউনিসেফ বলেছ, দুই দশক ধরে শিশু শ্রমের সংখ্যা ৯ কোটি ৪০ লাখ কমিয়ে রাখার যে সফলতা ও অর্জন তা কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

শুক্রবার দুই আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রকাশিত ‘কোভিড-১৯ ও শিশুশ্রম: সংকটের সময়, পদক্ষেপের সময়’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়েছে। 

এতে বলা হয়, এর মধ্যেই শিশু শ্রমে থাকা শিশুদের হয়তো আরো বেশি কর্মঘণ্টা কাজ করতে হবে বা আরও বাজে পরিস্থিতিতে পড়তে পারে। তাদের মধ্যে আরও বেশি সংখ্যায় হয়তো বাজে ধরনের শ্রমে নিযুক্ত হতে বাধ্য হবে, যা তাদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তায় মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে।

মহামারীকালে শিশু শ্রমের হালহকিকত নিয়ে জানতে চাইলে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, সচিব কে এম আব্দুস সালামকে ফোন করা হলেও তারা সাড়া দেননি। মন্ত্রণালয়ের মহিলা ও শিশু অধিশাখার দায়িত্বে থাকা সহকারী সচিব আছমা-উল-হোসেনকে এমএমএস পাঠালেও প্রত্যুত্তর আসেনি।

জরিপটি নিয়ে এএসডির নির্বাহী পরিচালক জামিল এইচ চৌধুরী বলেন, “করোনার কারণে সার্বিকভাবে শিশুরা ভিন্ন-ভিন্ন ধরণের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। প্রথমত নিন্ম ও দরিদ্র পরিবারের শিশুরা স্কুল থেকে ঝড়ে পড়বে।

“দ্বিতীয়ত পরিবারে কমে যাওয়া আয়ের যোগান দিতে গিয়ে অনেক শিশুই শ্রমবাজারে প্রবেশ করবে এবং সস্তায় শ্রম বিক্রি করবে,  এমনকি অনেকে ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়বে। তৃতীয়ত অনেক মেয়ে শিশু বাল্যবিবাহের শিকার হবে। চতুর্থত স্কুল বন্ধ থাকায় ঘরের মধ্যে শিশুরা নির্যাতনের শিকার হবে।”

শিশু শ্রম বৃদ্ধির আশঙ্কা করে তিনি বলেন, “সার্বিক বিবেচনায় শ্রম, ভিক্ষাবৃত্তি, বাল্যবিবাহের কারণে শিশুরা শিক্ষার মূল শ্রত ধারা থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে। পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় এসব শিশুদের বড় অংশ শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়বে।

“এসব কারণে শিক্ষার অগ্রগতির সূচকে আমাদে দেশ পিছিয়ে পড়বে, টেকশই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বিলম্বিত হবে এবং শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা প্রচেষ্টা নানাভাবে ব্যাহত হবে।”