বর্বরতার চরম সীমা দেখলাম: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের পর সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ‘বর্বরতার চরম সীমা’ দেখতে পাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2020, 12:32 PM
Updated : 6 Oct 2020, 12:32 PM

তিনি বলেছেন, ‘জঘন্য’ ওই অপরাধে যারা যুক্ত, আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তিই তাদের হবে।

মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ বিষয়ে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ধর্ষণ-নিপীড়নের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, “নোয়াখালীতে যেটা ঘটল, বর্বরতার একটা চরম সীমা আমরা দেখলাম। একজন বিবেকবান মানুষ এ ধরনের কাজ করতে পারে বলে আমার কাছে মনে হয় না।"

মাসখানেক আগে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বাড়িতে ঢুকে এক নারীকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে তাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন চালিয়ে তা ভিডিও করে একদল সন্ত্রাসী-মাদক কারবারি। পরে আবারও ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা ‘কুপ্রস্তাব’ দেয়, তাতে রাজি না হওয়ায় গত রোববার তারা ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেয় নির্যাতনের সেই ভিডিও।

আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “এই যে ঘটনাগুলি ঘটছে, যেমন ধর্ষণ, পর্নোগ্রাফির মত করে ভিডিও করে একজনের উপর নির্যাতন করা হয়েছে।… এ ধরনের জঘন্য অপরাধের জন্য কী শাস্তি হওয়া উচিত?

“অবশ্যই আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি তারা পাবে। আমরা সেই কাজটিই করব, যাতে করে একটা সুন্দর তদন্ত রিপোর্ট আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী দিতে পারেন। সেজন্য আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে।"

এদিকে গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন এক নারী। ছাত্রলীগের নয়জন কর্মী ওই নারীকে ক্যাম্পাস থেকে তুলে ছাত্রাবাসে নিয়ে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ধর্ষণ-নিপীড়নের একের পর এক ঘটনা পুরো দেশে ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে। নিপীড়কদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মিছিল-মানববন্ধন চলছে প্রতিদিনই। ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অপসারণও চাওয়া হয়েছে।

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের দাবি, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ‘যথাযথভাবে’ কাজ করছে বলেই দেশে ‘শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে’।

এমসি কলেজের ঘটনাটিকে ‘দুঃখজনক’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, “এ ধরনের ঘটনার মধ্যে যারা লিপ্ত হয়েছেন, তারা জঘন্য অপরাধ করেছেন, তার শাস্তি তাদের পেতে হবে। সেজন্য আমরা একটা নির্ভুল তদন্ত রিপোর্ট দেব, যাতে সেখানে তারা শাস্তি পায়।”

তিনি বলেন, এমসি কলেজের ঘটনায় যে মামলা হয়েছে, তার সব আসামিকে ইতোমধ্যে ধরা হয়েছে। আর নোয়াখালীর ঘটনায় দুইজন ছাড়া বাকি সবাইকে ধরা সম্ভব হয়েছে ।

“আমি কিন্তু সব সময় বলেছি, এ ধরনের ঘটনার পরপরই আমরা অপরাধীদের শনাক্ত করছি এবং ধরছি। এখানে কোনো রকমের শৈথল্য কিংবা গাফিলতি নিরাপত্তাবাহিনী দেখায়নি কিংবা করেনি। সব জায়গায় নিরাপত্তাবাহিনী যথাযথভাবে কাজ করছে। তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং যারা অন্যায় করেছে তাদেরকে ধরেছে।”

এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “দেখুন, আইনের শাসন আছে বলেই আমরা অপরাধীদের ধরতে সক্ষম হয়েছি এবং আইন অনুযায়ী তাদের ব্যবস্থা করার জন্য বিচারকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।

“এরকম যদি হত যে আমরা চুপচাপ এবং আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী চুপচাপ বসে আছে; এমন যদি হত যে তারা কিছুই করছে না, স্থানীয় প্রশাসন কিছুই করছে না। তাহলে আপনারা বলতে পারতেন আইনের শাসন নেই।”

ধর্ষক-নিপীড়কদের ‘সমাজবিরোধী ও অমানুষ’ আখ্যায়িত করে মন্ত্রী বলেন, “স্থানীয় প্রশাসন, ইউএনও, ডিসি, এসপি সবাই এক সঙ্গে কাজ করছে এসমস্ত ধর্ষক ও সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী সজাগ ও সতর্ক রয়েছে বলে অপরাধীদের ধরতে ও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারছি।”

নোয়াখালীতে নির্যাতনের সেই ঘটনা ঘটেছে এক মাস আগে, স্থানীয় প্রশাসন এতদিন কী করছে- এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সাধারণত যারা ভিকটিম হয়, তারা লুকিয়ে যায়, প্রকাশ করতে চায় না।

“এই জায়গায় কি সে রকম হয়েছে কিনা আমি জানি না। যখনই আমাদের নজরে এসেছে, তখন থেকেই আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী কাজ শুরু করেছেন এবং দ্রুততার সঙ্গে তাদেরকে ধরে ফেলেছে।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বিচারতো সব জায়গায় হচ্ছে। আমরা অনেক অভিযোগ পাচ্ছি সেগুলো আমলে নিয়ে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তদন্ত করে তাদেরকে ধরছে ও ব্যবস্থা নিচ্ছে। যেখানেই অভিযোগের সত্যতা পাচ্ছে, নিরাপত্তা বাহিনী কাউকে বাদ দিচ্ছে না, সবাইকে ধরছে।”

যৌনপল্লী ও পানশালা প্রসঙ্গ

দেশে বিভিন্ন যৌনপল্লী তুলে দেওয়া এবং পানশালার অবাধ অনুমোদন না থাকার সঙ্গে যৌন অপরাধ বেড়ে যাওয়ার কোনো সম্পর্ক আছে কি না, সে প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একজন সাংবাদিক।

উত্তরে তিনি বলেন, “আমাদের দেশে অনেক ব্রোথেল ছিল এক সময়, এখন দুই তিনটি আছে। আমাদের সমাজ এই ব্রোথেলকে এন্টারটেইন করছে না। সমাজ থেকেই আমরা দেখেছি লোকজন বেরিয়ে এগুলো বন্ধ করে দিয়েছে।

“এগুলোর ভালো ও মন্দ দুই প্রভাবই রয়েছে। সমাজ যদি না চায় তখনতো আমাদের কিছু করণীয় থাকে না বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া।”

সমাজের দাবিতেই প্রতিটি যৌনপল্লী বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এই যে নবাবপুরের ইংলিশ রোডে, নিমতলী, টানবাজার, টাঙ্গাইল- সব বন্ধ করেছে। এগুলো বন্ধ করতে শতশত মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে।”

মন্ত্রী বলেন, বার বা পানশালার ক্ষেত্রে সরকার লাইসেন্স দিয়েছে সীমিত আকারে। কিছু হোটেলকেও লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।

“এছাড়া ঢাকা ক্লাবসহ কয়েকটি ক্লাবেরও পানশালা বা বারের লাইসেন্স রয়েছে। যারা নিয়মিতভাবে আমাদের সকল শর্ত পূরণ করেছে, এ ধরনের কিছু বারকেই আমরা লাইসেন্স দিয়েছি। আমরা চিন্তাভাবনা করছি, আমাদের শর্ত পূরণ করে আবেদন করলে আমরা দেখব, আরও দেওয়া যায় কিনা।”