সৌদি আরব ফিরে যাওয়ার টিকেট পাওয়া নিয়ে ভোগান্তিতে পোহানো প্রবাসীরা ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে বিক্ষোভ করে পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হয়েছেন।
Published : 04 Oct 2020, 06:31 PM
রোববার কারওরান বাজার এলাকায় সোনারগাঁও হোটেলে সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্সের কার্যালয়ে সমানে এই ঘটনা ঘটে।
লাঠিপেটার পর বিক্ষুব্ধরা প্রায় দেড় ঘণ্টা কারওয়ান বাজারে সড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীসহ পথচারীরা।
মহামারীকালে দেশে আসা সৌদি আরব প্রবাসীদের ফেরতের জটিলতা কাটলেও যাত্রী অনেক হওয়ায় টিকেট পাওয়া নিয়ে বিড়ম্বনার অবসান এখনও ঘটেনি।
সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্সের টিকেট পেতে ভোর থেকেই প্রবাসীরা ভিড় করতে থাকে সোনারগাঁও হোটেলের সামনে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, টিকেটের আগে এয়ারলাইন্সটির টোকেনের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর প্রবাসীরা ভেতরে যেতে চাইলে সোনারগাঁও হোটেলের নিরাপত্তা কর্মীরা ফটক বন্ধ করে রাখে। এতে বিক্ষুব্ধ প্রবাসীরা বিক্ষোভ করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা হোটেলের ফটক ভেঙে ফেলে।
তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিপেটা করলে কয়েকজন আহত হন।
বেলা দেড়টার দিকে বিক্ষুব্ধরা সার্ক ফোয়ারার চতুর্পাশ আবরোধ করে। সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে থাকে।
বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ, টিকেট দিতে অনাবশ্যক দেরি করছে সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স। এতে তাদের নির্দিষ্ট সময় সৌদি আরব পৌঁছানো নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
বিক্ষোভে থাকা সোলায়মান চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সৌদি এয়ারলাইন্স জানিয়েছিলে, সকাল ১০টা থেকে টোকেন দেবে। সেই অনুযায়ী আমরা ৯টা থেকে এখানে। অথচ গেইটে আমাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
“চাকরিতে যোগ দিতে হবে ১১ অক্টোবরের মধ্যে। এখন যদি টিকেট আজকে না পাই তাহলে কীভাবে যাব? চরম অব্যবস্থা এখানে।”
বিক্ষোভকারীরা জানান, অব্যবস্থাপনার কারণে প্রায় এক ঘণ্টা টিকিটে দেওয়ার কাজ বন্ধ ছিল।
ময়মনসিংহ থেকে আসা আপেল বলেন, “রাত ৩টা থেকে এখানে অপেক্ষা করতেছি। সারারাত ঘুমাতে পারি নাই, মশার কামড় খেয়েছি। কিন্তু কোনো লাভ হয় নাই, টিকেট টোকেন কিছুই পাই নাই।
“কবে পাব, সেটাও জানতে পারলাম না। এ অবস্থায় আমাদের কী উপায়?”
বরিশালের বাসিন্দা সাইফ উদ্দীন বলেন, “টোকেন দেওয়ার কথা বলে সৌদি এয়ারলাইন্স হাজার হাজার মানুষকে একত্র করল, দিনরাত অপেক্ষা করিয়ে তারা কী দিল?
“এখানে পুলিশ এসে সবার নাম, ফোন নম্বর, ভিসার মেয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। এগুলো নেওয়া হচ্ছে মানুষকে রাস্তা থেকে সরানোর জন্য, লাভের লাভ কিছুই হবে না। কারণ কারা সঠিকভাবে লিখেছে, আর কারা সঠিকভাবে লিখেছে বোঝার উপায় নাই।”
সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা জানান, প্রবাসীরা এত বেশি চাপ সৃষ্টি করছে যে তাতে তাদের কাজের ব্যাঘাত ঘটছে।
“টিকেটিং সিস্টেমের বিষয়টা সকলকে বুঝতে হবে। এজন্য সময় দিতে হবে। অপেক্ষা করতে হবে। এভাবে করলে তো টিকেট দেওয়া সম্ভবপর হবে না,” বলেন এক কর্মকর্তা।
সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্সের সেলস ম্যানেজার ওমর খৈয়াম বলেন, “এখানে আকস্মিকভাবে হাজার দশেকের মতো লোক জড়ো হয়ে গিয়েছিল। এটা ছিল সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত এবং আমাদের ধারণার বাইরে।
“দুপুর থেকে আমরা তাদের নাম, নম্বর, ভিসার মেয়াদ সংগ্রহ করার চেষ্টা চালাচ্ছি। যাতে যাদের ভিসার মেয়াদ আগে শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকেট দেওয়া যায়।”
টিকিট দ্রুত দেওয়ার চেষ্টা করছেন দাবি করে সৌদি এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা প্রবাসীদের সবুর করার অনুরোধ জানিয়েছেন।