দুই বছর আগে রাজধানীর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে বাসের চাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে আরও ২০ লাখ টাকা দেবে গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ।
Published : 01 Oct 2020, 01:20 PM
বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচাপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার গ্রিন লাইন পরিবহনের সম্মতির ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত দেয়।
রাসেল সরকারকে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রশ্নে এর আগে হাই কোর্ট যে রুল জারি করেছিল, তার নিষ্পত্তি করেই এ রায় এল।
আদালত বলেছে, আগামী তিন মাসের মধ্যে ওই ২০ লাখ টাকা একসঙ্গে পরিশোধ করতে হবে গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষকে।
টাকা পরিশোধের পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে জমা দিতে।
আর টাকা পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে রাসেল সরকারকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
তাদের সম্মতির ভিত্তিতে এই রায় হওয়ায় এর বিরুদ্ধে আর আপিল হবে না বলে জানিয়েছেন উভয় পক্ষের আইনজীবীরা।
এর আগে তিন দফায় রাসেলকে মোট ১৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা দিয়েছিল গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষ। হাই কোর্টের রায়ের ফলে সব মিলিয়ে তিনি পাবেন ৩৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা।
রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাসেল সাংবাদিকদের বলেন, “যে অর্থটা মহামান্য হাই কোর্ট আমাকে দিয়েছেন, সেটা দিয়ে আমার সন্তানদের মানুষের মত মানুষ করার চেষ্টা করব।”
ওই ২০ লাখ টাকা ব্যাংকে রেখে যে সুদ পাওয়া যাবে, তা দিয়ে সংসার চালানোর কথা ভাবছেন রাসেল। অথবা ওই সুদের টাকা দিয়ে যদি কিছু জমি বর্গা নিতে পারেন, সেখান থেকে হয়ত কিছু ধান পাবেন।
“যেহেতু কিছু করতে পারব না, এভাবেই চলতে হবে আমাকে। এভাবেই বাকি জীবনটা চালিয়ে নিতে হবে।”
দুর্ঘটনার আগে রাসেল নিজেও ছিলেন একজন গাড়ি চালক। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “একশ কোটি টাকা দিলেও আমার পা কেউ এনে দিতে পারবে না। এখন ২০ লাখ টাকা দিয়ে যদি পা লাগাই, তাও আমি আগের জীবনে ফিরে যেতে পারব না।
“আমি একটা জিনিসই বলব, যারা এই ধরনের বেপরোয়া ড্রাইভিং করে, তারা সচেতন হোন। তাদের একটু ভুল, একটু আগে যাওয়ার চেষ্টা, দশ টাকা বেশি কামাইয়ের চেষ্টা আরেকজনের জীবনকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে। আমি চাই তারা সতর্ক হয়ে যেন রাস্তায় গাড়ি চালান।”
আদালতে রিটকারী পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা। গ্রিন লাইনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম। বিআরটিএর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. মোয়াজ্জেম হোসেন।
রায়ের পর খন্দকার শামসুল হক রেজা সাংবাদিকদের বলেন, “করোনা পরিস্থিতি, ব্যবসায় মন্দাসহ সব দিক বিবেচনা করে আদালত দুই পক্ষের সম্মতিতে আরও ২০ লাখ টাকা দিতে বলেছেন।”
গ্রিনলাইনের আইনজীবী মঞ্জুরুল হক বলেন, “আদালত জানতে চাইলেন, আমরা কত টাকা দিতে পারব। আমি আদালতকে বললাম আগে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা দিয়েছি। এর বাইরে আমি আরও ১৫ লাখ টাকার কথা বলেছিলাম।
“তখন আদালত বললেন, ১৫ লাখ টাকা দিতে পারলে আরও ৫ লাখ টাকা দিতে পারবেন। অর্থাৎ আদালত আরও ২০ লাখ টাকা দিতে বলেছেন।… মোটামুটি এটা একটা সম্মত রায়। মানবিক কারণে আমরার সম্মত হয়েছি। যেহেতু সে পা হারিয়েছে। তাকে একটা ক্ষতিপূরণ দেওয়া দরকার।”
মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল গ্রিন লাইন পরিবহনের ধাক্কায় মারাত্মক আহত হন গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার পার্বতীপুর গ্রামের মো. শফিকুল আসলামের ছেলে রাসেল সরকার।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক পর্যায়ে তার একটি পা কেটে ফেলতে হয়। তার আরেক পায়ের অবস্থাও ভালো নয়।
এ অবস্থায় রাসেলের পক্ষ হয়ে তাকে আইনগত সহায়তা দিতে এগিয়ে আসেন গাইবান্ধার একই এলাকার বাসিন্দা জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সরকার দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী উম্মে কুলসুম স্মৃতি।
রাসেল সরকারের জন্য কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন এই আইনজীবী। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট রুল জারি করে। পরে গত বছর ১২ মার্চ আদালত ৫০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দেয়।
পরে ওই বছরের ১০ এপ্রিল আরেক আদেশে হাই কোর্ট প্রতিমাসে ৫ লাখ টাকা করে দিতে নির্দেশ দেয় গ্রিন লাইনকে।
ওই নির্দেশের পর গত বছর জুলাই পর্যন্ত তিন দফায় মোট ১৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা দেয় গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষ। পরে আপিল বিভাগ ওই আদেশ স্থগিত করে দেয়। এরপর আর কোনো টাকা দেয়নি গ্রিনলাইন পরিবহন।
এ অবস্থায় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া প্রশ্নে রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি হয়। বৃহস্পতিবার সেই রায়ে রাসেলকে আরও ২০ লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিল হাই কোর্ট।
পুরনো খবর: