বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধে দেশটির আচমকা পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
Published : 20 Sep 2020, 07:38 PM
চলতি মাসের শেষ নাগাদ দুদেশের মন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) সভায় পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ও সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার জোরালো প্রতিবাদ জানাতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়েছে।
রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। এদিন ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের কথা থাকলেও তা হয়নি। জেসিসির বৈঠক শেষে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে বলে কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সভা শেষে কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর জেসিসির মিটিং। ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। কিন্তু কিছু কর্মকাণ্ডের জন্য সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে। এত কষ্ট করে সম্পর্ক উন্নয়ন করি আর ছোট্ট পেঁয়াজের জন্য সম্পর্ক নষ্ট হয়।
“এর কারণে জনমনে বিরূপ প্রভাব পড়ে। হঠাৎ বন্ধ করে দিয়ে পরে দুঃখপ্রকাশ- এসব কোন ধরণের আচরণ?”
ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় গত বছরের মতো এবারও লাগামহীন হয়ে উঠেছে দেশে পেঁয়াজের বাজার। গত শুক্রবার নাগাদ খুচরায় ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা আর দেশি ক্রস জাতীয় পেঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
হুট করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধে উদ্বেগ জানিয়ে ফের তা চালু করতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। গত ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনে মঙ্গলবার লেখা চিঠিতে এ আহ্বান জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন জানান, বিষয়টি নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘অনুতপ্ত।’
এদিকে জেসিসির বৈঠকে সীমান্ত হত্যা বন্ধে বাংলাদেশকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি।
বৈঠক শেষে ফারুক খান দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সম্মেলনের কথা তুলে ধরে বলেন, “গত দুই দিন ভালো মিটিং হয়েছে। এরকম ভালো মিটিং দশটা দেখেছি। দশটা মিটিংয়ে বলা হয়েছে সীমান্তে হত্যা বন্ধ হবে, কিন্তু হয়নি। জোর দিয়ে এগুলো বলতে হবে। আমরা এগুলো বন্ধ চাই। জোরে শোরে এটা বলতে হবে।”
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহতের ঘটনা বরাবরই আলোচনায় থাকে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার মধ্যে ভারত প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর সীমান্তে হত্যাকাণ্ড কয়েক বছর আগে কমে এলেও সম্প্রতি তা আবার বাড়ছে।
শনিবার শেষ হওয়া দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধানদের সম্মেলনেও আগের মত ভারতের পক্ষ থেকে এই হত্যা শূন্যের কোঠায় আনার আশ্বাস পাওয়া গেছে।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সাড়ে আট মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে সহিংসতায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩৯ বাংলাদেশির। এর মধ্যে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে বিএসএফ সদস্যদের গুলিতে। পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে বিএসএফ সদস্যদের শারীরিক নির্যাতনের পর।
গত বছর এই সময় (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) সীমান্তে বিএসএফের গুলি বা নির্যাতনে মারা গিয়েছিলেন ২৮ জন বাংলাদেশি।
গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৮ সালে সীমান্ত হত্যা কিছুটা কমলেও সেটি তিন গুণ বাড়ে ২০১৯ সালে।
সংস্থাটির আরেক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে সীমান্তে ১৫৮ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে।