টিকা রাজনীতির বিষয় নয়: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, টিকা ‘রাজনীতির কোনো বিষয় নয়’ এবং করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন সংগ্রহে রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশ ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও বাংলাদেশ যোগাযোগ করছে।  

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2020, 12:17 PM
Updated : 24 August 2020, 12:17 PM

সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তাইওয়ানের দেওয়া চিকিৎসা সরঞ্জাম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।

বাংলাদেশে চীনের তৈরি ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের বিষয়টি ঝুলে থাকার মধ্যেই ভারতে তৈরি সম্ভাব্য টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বাংলাদেশে করার আগ্রহ দেখিয়েছে সরকার। 

এই প্রেক্ষাপটে টিকা নিয়ে বাংলাদেশ আঞ্চলিক রাজনীতির মধ্যে পড়ে গেছে কিনা- এমন প্রশ্ন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সামনে রাখেন একজন সাংবাদিক।

জবাবে জাহিদ মালেক বলেন, “এটা কোনো রাজনৈতির বিষয় নয়, এটা স্বাস্থ্য সেবার বিষয়। কোভিড-১৯ একটি বৈশ্বিক মহামারী। পৃথিবীর সব দেশেই এটা ছেয়ে গেছে। লাখ লাখ মানুষ মারা গেছে। বিশ্বব্যাপী দুই কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। কাজেই এগুলো নিয়ে কোনো রাজনীতির জায়গা হয় না।

“যখন ভ্যাকসিন তৈরি হবে এবং সেটা কার্যকর ও অ্যাভেইলেবল হবে, যে ভ্যাকসিনটা আমরা সাশ্রয়ী দামে তাড়াতাড়ি পাব, আমরা সেটিই সংগ্রহ করব।”

রাশিয়া ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের টিকা বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে। সেই টিকা পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে কিনা- তা জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা।

জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “সবার সাথে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। আমাদের অ্যাম্বেসি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুই জায়গা থেকেই যোগাযোগ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরও এ বিষয়ে অবহিত আছে। সব জায়গায় যোগাযোগ করা হচ্ছে, সময় মত আমরা ভ্যাকসিন পেয়ে যাব।”

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক (ফাইল ছবি)

চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের করোনাভাইরাসের টিকা এখন তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া রাশিয়া প্রথম দেশ হিসেবে টিকা উৎপাদন শুরু করে দিয়েছে।

কোনো টিকার চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে বিপুল সংখ্যক মানুষের শরীরে প্রয়োগ করে তার ফলাফল দেখতে হয়। পরীক্ষায় নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণিত হলেই সেই টিকা অনুমোদন পায়।

চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেক লিমিটেড তাদের তৈরি করা টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা বাংলাদেশেও করার পরিকল্পনা করে। গত ১৮ জুলাই এই টিকা বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমোদনও দেয় বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল, বিএমআরসি। কিন্তু পরে বিষয়টি ঝুলে যায়। 

বাংলাদেশে চীনের টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বিষয়ে এক প্রশ্নে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “যখন এর সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে, তখন আমরা ট্রায়াল করব।”

চীনের তৈরি টিকার পরীক্ষা ঝুলে থাকার মধ্যেই ভারতে তৈরি সম্ভাব্য টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য বাংলাদেশ ‘প্রস্তুত’ বলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন গত সপ্তাহে জানান।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করা টিকার পরীক্ষা ও উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত হয়েছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটি অফ ইন্ডিয়া (এসআইই)। দ্বিতীয় ধাপ থেকেই কোভিশিল্ড নামের ওই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে যাচ্ছে দেশটির সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী এই সংস্থা।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, টিকার বিষয়ে গত জুলাই মাসেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বাংলাদেশ।

“তারা আমাদের বলেছেন, যখন তারা ভ্যাকসিন পাবেন, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে তারা ২০ শতাংশ পর্যন্ত দিতে পারবেন। এমন আশ্বাস তাদের কাছ থেকে আমরা পেয়েছি।”

অন্যান্য দেশের যেসব প্রতিষ্ঠান টিকা উৎপাদনে এগিয়ে আছে, তাদের সাথেও যোগযোগ আছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “এসব বিষয় প্রধনমন্ত্রীকে আমরা জানিয়েছি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীই নেবেন। যখন সময় হবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আমরা সিদ্ধান্ত পেয়ে যাব। সে সিদ্ধান্ত পেলেই আমরা জানাতে পারব।”

জাহিদ মালেক বলেন, “করোনাভাইরাসে অন্যান্য উন্নত দেশের তুলানায় বর্তমানে দেশে মৃত্যুহার কম। আক্রান্তও কমে আসছে। তাছাড়া অনেকেই টেলিমেডিসিন সেবা নিয়ে বাসায় সেরে উঠছেন।”

কোভিড-১৯ হাসপাতালগুলোর ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শয্যা ‘খালি পড়ে আছে’ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “এসব হাসপাতালের কিছু শিগগিরই আমরা নন-কোভিডি হাসপাতালে রূপান্তরিত করব।”

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই অনুষ্ঠানে তাইওয়ানের দেওয়া এক লাখ সার্জিকাল মাস্ক, এক হাজার ৬০০ এন৯৫ মাস্ক, ২০ হাজার কাপড়ের মাস্ক, ১০ হাজার ফেইস শিল্ড, ২০০ গগলস এবং ২ সেট ভেন্টিলেটর হস্তান্তর করা হয়।

বাংলাদেশের প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন এবং তাইওয়ানের এক্সটারনাল ট্রেড ডেভলপমেন্ট কাউন্সিল (টিএআইটিআরএ) যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।