ভারতের সঙ্গেও টিকা পরীক্ষার আলোচনায় যাচ্ছে বাংলাদেশ

চীনের আবিষ্কৃত করোনাভাইরাসের টিকার পরীক্ষা সংক্রান্ত অনুমোদন ঝুলে থাকার মধ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকা উৎপাদনের সঙ্গে ‍যুক্ত ভারতের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনায় যাচ্ছে বাংলাদেশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2020, 12:41 PM
Updated : 18 August 2020, 01:53 PM

ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে বুধবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে ওই টিকার পরীক্ষার বিষয় থাকছে বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা অফার করব, আমাদের এখানেও যদি ট্রায়ালের সুযোগ থাকে, অক্সফোর্ডেরটার কোম্পানি যেটা কাজ করতেছে, তাদের সঙ্গে আমরা লন্ডন মারফত যোগাযোগ করেছি।

বুধবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে টিকা পরীক্ষার বিষয়েও আলোচনা হবে বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানিয়েছেন।

“এখন ইন্ডিয়ান বিভিন্ন ভ্যাকসিন প্রডিউসার তারা এটার এই মুহূর্তে ব্যবসায়িক দিকটা দেখছেন। সুতরাং আমাদের একটা প্রচেষ্টা আছে যে, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় যেগুলো ভ্যাকসিন ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে বা চালু হচ্ছে, সেগুলো পাওয়ার ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা চলছে।”

কোনো টিকার চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে বিপুল সংখ্যক মানুষের শরীরে প্রয়োগ করে তার ফলাফল দেখতে হয়। পরীক্ষায় নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণিত হলেই সেই টিকা অনুমোদন পায়।

চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের করোনাভাইরাসের টিকা এখন তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া রাশিয়া প্রথম দেশ হিসেবে টিকা উৎপাদন শুরু করে দিয়েছে।

এর মধ্যে চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেক লিমিটেড তাদের তৈরি করা টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা বাংলাদেশেও করার পরিকল্পনা করে। গত ১৮ জুলাই এই টিকা বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমোদনও দেয় বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল, বিএমআরসি।

ঘোষণা অনুযায়ী, এই টিকার বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের কাজটি করবে আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র আইসিডিডিআর,বি। আগামী ১৮ মাস ধরে দেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের কথা রয়েছে।

তবে এখনও পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়নি। বিষয়টি নতুন হওয়ায় সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম এর আগে জানিয়েছিলেন।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার আবিষ্কৃত টিকার পরীক্ষা ও উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত হয়েছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটি অফ ইন্ডিয়া (এসআইই)। দ্বিতীয় ধাপ থেকেই কোভিশিল্ড নামক টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে যাচ্ছে দেশটির সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী এই সংস্থা।

এর মধ্যে মঙ্গলবার দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শ্রিংলা। তার সঙ্গে বুধবার দুপুরে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন মাসুদ বিন মোমেন।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়টিরসহ অন্য টিকাগুলো যাতে বাংলাদেশ দ্রুত পেতে পারে, সে বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত রাখা হচ্ছে বলে সাংবাদিকদের জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ।

তিনি বলেন, “সেটা অ্যামেরিকানদেরটা হোক, অক্সফোর্ডেরটাই হোক- তারা ইন্ডিয়াতে ট্রায়াল দিচ্ছে, এগুলোর সবগুলো কীভাবে এক্সেস আমরা পেতে পারি, দ্রুত, সে ব্যাপারে সবার সাথে আমাদের আলাপ-আলোচনা চলছে, তো সেটার পার্ট হিসাবে তাদের সঙ্গে আমরা আলাপ করব।

“আমরা আলাপ আলোচনা করব, আমরা কীভাবে সবার সাথে সহযোগিতা করতে পারি। সুতরাং আমাদের যেটা সবচেয়ে সেইফ মনে হবে বা সবচেয়ে বেশি ইউজফুল মনে হবে আমরা সেদিকেই যাব। সুতরাং সব অপশনই আমাদের জন্য থাকা উচিত।”

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন

ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের সফর নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের মুখ না খোলার মধ্যে ‘আকস্মিক’ এই সফরের আলোচ্যসূচি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গুঞ্জন ছিল।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “আকস্মিক না এটা। যেহেতু আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী ভারত, সুতরাং ভারতের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে, বিভিন্ন পর্যায়ে প্রচুর ইনটার‌্যাকশন হয়। এ বছর কোভিডের কারণে বরঞ্চ কমই হচ্ছে।”

বুধবার দুই পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠকের আগে শ্রিংলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে যাবেন বলে আভাস দেন বিন মোমেন।

বৈঠকের অন্যান্য এজেন্ডা সম্পর্কে সচিব বলেন, “যেহেতু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন সব সময় আমাদের এজেন্ডার মধ্যে থাকে। যে বিষয়টি আছে, বাংলাদেশ এবং ভারত কীভাবে আরও সহযোগিতা জোরদার করতে পারে।

“ইতোমধ্যে তারা কিছু সাহায্য পাঠিয়েছিল প্রথম প্রথম। তো, আমরা এখন জানি, তাদের ওখানে ভ্যাকসিনও ডেভেলপ করছে। সুতরাং উই ক্যান আপডেট ইচ আদার, আমরা কোন পর্যায়ে আছি।”

এছাড়া শ্রিংলার মার্চের সফরে আলোচনার অগ্রগতিও এবারের বৈঠকের এজেন্ডায় থাকছে জানিয়ে তিনি বলেন, “যেহেতু উনি এর আগে মাস ছয়েক হয়ে গেছে এসেছেন, এর মধ্যে যে সমস্ত অগ্রগতি হচ্ছে বা হয়েছে… বেশ কিছু ভালো কাজ হয়েছে আপনারা জানেন যে ট্রান্সশিপমেন্টের কিছু কাজ হয়েছে, তারপরে রেলওয়ের বিভিন্ন রকম ত্বরাণ্বিত হয়েছে সহযোগিতার প্রক্রিয়া।

“সেগুলো আমরা আলোচনা করব। এবং সামনে আরও কী করা যায়, সেগুলো আলোচনা করব।”

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়টিও আলোচনায় থাকছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “রোহিঙ্গা ইস্যুটা, তারা বিভিন্ন সময় বলেছে যে, আমাদের সাথে সহযোগিতা করবে এবং মিয়ানমারের যে কর্তৃপক্ষ আছে তাদেরকেও তারা বিভিন্ন হেল্প করছে, যাতে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন যথা শিগগিরই শুরু হতে পারে।

“এ ব্যাপারে তাদের দিক থেকে যদি কোনো আপডেট থাকে, আমরা জানতে পারব। এবং আমরা কোন পর্যায়ে আছি, তাদেরকে আপডেট দিব।”

বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তান ও চীনের সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরের সঙ্গে এই সফরের সম্পর্ক আছে কি না সে প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব মোমেন বলেন, “এখানে তেমন কিছু স্পেকুলেট করার সুযোগ নাই। যেটা বললাম আগে… আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক আসলে অনেক গভীর। এই গভীর সম্পর্ক আমাদের সারাক্ষণ নার্চার করতে হয়, যাতে করে কোনো ভুল বোঝাবুঝির স্কোপ না থাকে।

“আমরা সাম্প্রতিক সময়ে দেখেছি, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নানা রকমের স্পেকুলেটিভ নিউজ এসেছে, সেগুলো নিয়েও আমরা আলোচনা করব যে, এগুলোর কোনো ভিত্তি আমরা দেখি না। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেকটা নিবিড় আছে, সেটা আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধে প্রোথিত আছে। সে কারণে আমাদের কোনো রকমের ল্যাপস না থাকে, সে ব্যাপারেও আমরা আলোচনা করব।”

গণমাধ্যমের খবর সম্পর্কে আরেক প্রশ্নে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “আজকালতো অনেক মিডিয়া যথেষ্ট সচল আছে এবং নানান রকমের পোর্টাল আছে, যাদের গ্রহণযোগ্যতা বা ক্রেডিবিলিটি হয়ত সে রকম নাই। কিন্তু একটা নিউজ হয়ত ছেড়ে দিল।

“সেক্ষেত্রে আমরা আলোচনা করব, সেগুলো যাতে আমরা নিরুৎসাহিত করতে পারি। এগুলো যাতে আমাদের সম্পর্কে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলতে না পারে।”

এ দিকে মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভারতীয় হাই কমিশন বলেছে, “পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করতে ও দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা এগিয়ে নিতে’ এই সফরে এসেছেন শ্রিংলা।