অস্ত্রসহ তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে ঢাকার মিরপুর পল্লবী থানায় নিয়ে যাওয়ার পর তাদের সঙ্গে জব্দ করা একটি ওজনযন্ত্রে লুকানো বোমা বিস্ফোরণে এক পুলিশ পরিদর্শকসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন।
Published : 29 Jul 2020, 10:49 AM
বুধবার ভোর সোয়া ৬টার দিকে পল্লবী থানার ভেতরে এ ঘটনা ঘটে বলে ঢাকার পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম জানান।
পুলিশ বলছে, এ ঘটনার সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। গ্রেপ্তার তিনজন ‘ভাড়াটে খুনি’, যারা স্থানীয় কোনো একজন রাজনৈতিক নেতাকে হত্যা করতে চেয়েছিল।
বিস্ফোরণে আহতরা হলেন পল্লাবী থানায় পরিদর্শক (অপারেশনস) এমরানুল ইসলাম, এসআই রুমি, পিএসআই সজীব ও অঙ্কুর এবং রিয়াজ নামের একজন।
“সজীবের কানে সমস্যা হয়েছে, রুমির বাঁ হাতে জখম, রিয়াজেরও হাতে জখম। আর পরিদর্শক এমরানের বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচে জখম হয়েছে।”
তিনি বলেন, সজীব ও রিয়াজকে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে। এমরান ও রুমি চিকিৎসা নিয়ে বাসায় চলে গেছেন।
আহতদের মধ্যে রিয়াজের অবস্থা গুরুতর জানিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আলাউদ্দিন বলেন, “তার বাঁ হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ডান হাতের তর্জনীও আলাদা হয়ে গেছে। তলপেটে গুরুতর জখম রয়েছে। ভেতরেও ক্ষত থাকতে পারে। তার অপারেশন লাগবে।”
কী ঘটেছিল?
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় জানান, কালশী কবরস্থানের কাছে ‘একদল সন্ত্রাসী’ অবস্থান করছে খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে পল্লবী থানা পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়।
“অভিযানে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আরও কয়েকজন ছিল, তারা পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে দুটি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি এবং একটি ডিভাইস পাওয়া যায়, যেটি দেখতে ওজন মাপার মেশিনের মত।”
এরপর বোমা নিস্ক্রিয়কারী দলকে খবর দেওয়া হলে তারা এসে ডিউটি অফিসারের কক্ষে ওই ওজন মাপার মেশিন পরীক্ষা করেন। পরে আরেকটি বিশেষজ্ঞ দলকে ডাকা হয়, তারা পৌঁছানোর আগেই বিস্ফোরণ ঘটে বলে পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
ওই বিস্ফোরণের ধাক্কায় পল্লবী থানার দোতলার জানালার কাচ ভেঙে যায়। আশপাশের মানুষের মধ্যে তৈরি হয় আতঙ্ক। পিবিআইসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।
দুপুরে থানার সামনে এক ব্রিফিংয়ে কৃষ্ণপদ রায় বলেন, “ওই যন্ত্রে চারটি বিস্ফোরক ছিল। তার মধ্যে একটি বিস্ফোরিত হয়েছে। বাকিগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।”
বোমাগুলো কতটুকু শক্তিশালী ছিল তা ‘পরীক্ষা না করে বলা যাবে না’ জানিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বিস্ফোরণে পাঁচজন আহত হলেও থানার ভেতরে ভবনের বড় কোনো ক্ষতি হয়নি।”
এ ঘটনার সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ প্রাথমিকভাবে পাওয়া যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “গ্রেপ্তার তিনজন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। আমরা বিষয়টা তদন্ত করে দেখছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) ওয়ালিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গ্রেপ্তার তিনজন ‘ভাড়াটে খুনি’ বলে তারা তথ্য পেয়েছেন।
“পুলিশের কাছে তথ্য ছিল তারা পল্লবীর স্থানীয় একজন রাজনৈতিক নেতাকে হত্যা করবে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের পর বিষয়গুলো স্পষ্ট হবে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বড় কোনো নেতা নয়, স্থানীয়ভাবে থাকে না অনেক ধরনের দুশমনি? সেইরকম শত্রুতা থেকে কোনো একজনকে হত্যা করার পরিকল্পনার কথা তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে বলেছে।”