কলেজ ছাত্রকে পুলিশি নির্যাতন: বিচারিক তদন্তের নির্দেশ

যশোরে কলেজ ছাত্র ইমরান হোসেনের ওপর পুলিশি নির্যাতনের ঘটনায় বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 July 2020, 02:48 PM
Updated : 6 July 2020, 03:18 PM

যুগ্ম জেলা জজ বা তার উপরের পদমর্যাদার একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে দিয়ে ওই ঘটনার তদন্ত করে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে যশোরের জেলা ও দায়রা জজকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইমরানকে নির্যাতনের অভিযোগের বিচারিক তদন্ত, ক্ষতিপূরণ এবং তার চিকিৎসা ব্যয় বিবাদীদের বহন করার নির্দেশনা চেয়ে করা একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার এ আদেশ দেয় বিচারপতি জেবিএম হাসানের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ।

ইমরান হোসেন যশোর সদর উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের নেছার আলীর ছেলে। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

ওই তরুণের অভিযোগ, সাজিয়ালি ফাঁড়ির কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাকে বেধড়ক মারধর করে এবং পকেটে গাঁজার পোটলা রেখে রিমান্ডের হুমকি দিয়ে তার বাবার কাছে ২৫ হাজার টাকা দাবি করে। পরে ছয় হাজার টাকায় তার মুক্তি মেলে।

হাসপাতালে নেওয়ার পর জানা যায়, ইমরানের দুটি কিডনির অবস্থাই খারাপ। স্বাভাবিক অবস্থায় যেখানে রক্তে ক্রিটেনিনের মাত্রা থাকে ১.৪ এর নিচে, সেখানে ইমরানের তা ছিল ৮.৮।

গত ৯ জুন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ ঘটনার খবর প্রকাশিত হলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ১১ জুন উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং দায়ী পুলিশ সদস্যের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে।

এরপর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. হুমায়ুন কবির পল্লব ও মোহাম্মদ কাউছার গত ১৮ জুন হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করেন। ইমরানকে নির্যাতনের অভিযোগের বিচারিক তদন্ত, ক্ষতিপূরণ এবং তার চিকিৎসা ব্যয় বিবাদীদের বহন করার নির্দেশনা চাওয়া হয় সেখানে।

সেই আবেদনে গত ২৩ জুন হাই কোর্ট এক আদেশে যশোরের সিভিল সার্জনকে ইমরানের স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন এবং পুলিশ সুপারকে নির্যাতনের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলে। সেই প্রতিবেদন ২৮ জুন আদালতে উপস্থাপন করা হয়।

সিভিল সার্জনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইমরানের কিডনি এখন স্বাভাবিক, শারীরীকভাবেও তিনি এখন সুস্থ।

আর পুলিশ সুপারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইমরানের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে আটককারী তিন পুলিশ সদস্য ‘অনৈতিকভাবে অর্থ নিয়ে’ ইমরানকে ছেড়ে দিয়েছিল।

এ দুই প্রতিবেদন দেখার পর সেদিন আদালত ইমরানের ডোপ টেস্ট করাতে বলে। পাশাপাশি তার চিকিৎসা সংক্রান্ত আনুষাঙ্গিক কাগজপত্র রোববারের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে যশোরের সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেয়।

সে নির্দেশ অনুযায়ী সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে ইমরান হোসেনের ডোপ টেস্টের রিপোর্ট সোমবার আদালতে উপস্থাপন করা হয়।  রিটকারী দুই আইনজীবী এ দিন শুনানিতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।

শুনানির পর আইনজীবী পল্লব পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যশোর সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে ইমরানের ডোপ টেস্ট করার পর একটি প্রতিবেদন আজ দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইমরানের শরীরে মাদক গ্রহণের কোনো নমুনা পাওয়া যায়নি। এটা দেখার পর আদালত যশোরের জেলা ও দায়রা জজকে বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।”