যশোরে ‘কিডনি অকেজো হতে বসা’ এক কলেজছাত্রকে পুলিশ নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়ায় তদন্ত শুরু হয়েছে।
Published : 08 Jun 2020, 06:35 PM
‘নির্যাতনের শিকার’ সদরের কাজী নজরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইমরান হোসেন বর্তমানে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ হাসপাতালের কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. উবায়দুল কাদির উজ্জ্বল বলেন, “ইমরানের দুটি কিডনির ফাংশন খুবই খারাপ।
“স্বাভাবিক অবস্থায় কিডনির ক্রিটেনিন এক দশমিক চার থাকার কথা কিন্তু ইমরানের তা ছিল আট দশমিক আট। আজ এটা আরো বেড়েছে।”
চিকিৎসায় ইমরানের কিডনি সারবে কিনা তা নিয়ে এ চিকিৎসকের সংশয় রয়েছে।
ইমরান হোসেন যশোর সদর উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের নিকার আলীর ছেলে।
কলেজছাত্র ইমরানের ভাষ্য, গত বুধবার সন্ধ্যায় তিনি সলুয়া বাজার এলাকা থেকে তার বাড়ি ফিরছিলেন। তার সঙ্গে একই এলাকার আরেক ছেলে ছিল। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে স্থানীয় সাজিয়ালি ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা তাদের গতিরোধ করেন।
তার সঙ্গী ছেলেটির ব্যাগ তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। এ সময় ভয়ে ইমরান দৌঁড় দেন বলে জানান তিনি।
পুলিশ তাকে ধাওয়া করে ধরে বেধড়ক মারধর করলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। পরে জ্ঞান ফেরে। পকেটে গাঁজা দিয়ে আটকের হুমকি দিয়ে তাকে ছাড়াতে ইমরানের বাবার কাছে ফোনে এক পুলিশ সদস্য ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ করছেন ইমরান।
পরে ছয় হাজার টাকা দিয়ে ইমরান পুলিশের কাছ থেকে ছাড়া পান। তবে মারপিটের ঘটনা কাউকে বললে রিমান্ডে নিয়ে ফের পেটানোর হুমকি দেয় পুলিশ বলেও দাবি করছেন ইমরান।
“ভয়ে আমি কাউকে কিছু বলিনি। তিনদিন পেটের ব্যথায় মরে যাচ্ছি বলে মনে হয়েছে। সহ্য করতে না পেরে মা-বাবাকে নির্যাতনের বিষয়টি জানাই। এরপর তারা আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।”
ইমরানের মা বুলবুল বেগম বলেন, “এভাবে কেউ কাউকে নির্যাতন করতে পারে? ছেলেটারে শেষ করে ফেলেছে। ওর চিকিৎসা কীভাবে করাব? বাঁচবে কি-না জানি না। আমি এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তি চাই।”
ইমরানের বাবা নিকার আলী বলেন, “আমার ছেলে লেখাপড়া করে। এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখেন, কোনো খারাপ কাজের সাথে নেই সে। অথচ তাকে ধরে নির্যাতন করা হল।”
তবে টাকার বিনিময়ে ইমরানকে ছাড়ার কথা অস্বীকার করছেন সাজিয়ালি পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মুন্সি আনিচুর রহমান।
তিনি জানান, ঘটনার দিন সকালে তিনি যশোর কোতয়ালি থানায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে রাত ১২টার দিকে ক্যাম্পে ফেরেন। এসে জানতে পারেন এএসআই সুমারেশ সাহা, এএসআই সাজদার রহমান ও চার জন কনস্টেবল ওই কলেজছাত্রকে আটক করেছিল।
অসুস্থ হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে তার বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ইমরানকে ছাড়তে কোনো টাকা-পয়সার লেনদেন হয়নি।
অন্যদিকে, এ নির্যাতনে অভিযোগ পেয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন যশোরের পুলিশ সুপার।
পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ আশরাফ হোসেন বলেন, যদি কোনো পুলিশ সদস্য টাকা লেনদেন বা শারীরিক নির্যাতনে জড়িত বলে প্রমাণিত হয়, তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে এ ঘটনায় পরস্পরবিরোধী তথ্য পাওয়া যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই ছেলেটি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত কি-না খোঁজও নেওয়া হচ্ছে।
“এখন পর্যন্ত যে ইনফরমেশন পাওয়া যাচ্ছে, তা হলো, পুলিশের কাছে তথ্য ছিল ওই রাস্তা দিয়ে মাদকদ্রব্য আসবে। সেই অনুযায়ী ওই ছেলে দুটোকে আটক করেছিল পুলিশ। ওই সময় ইমরান নামে ছেলেটি দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে। পড়ে গিয়ে সে আঘাত পায়। পিছু ধাওয়াকারী পুলিশ সদস্যরা তাকে কাদার মধ্যে থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।”