এবার যেন আটঘাট বেঁধে আসছে আষাঢ়; দুয়ারে বর্ষার এমন সময়ে দেশজুড়ে বিস্তার ঘটেছে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর।
Published : 14 Jun 2020, 03:09 AM
৩০ জ্যৈষ্ঠ শনিবার রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ এলাকায় ছিল বর্ষণমুখর দিন।
আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলছেন, পঞ্জিকার পাতা ধরে বর্ষা আসতে আরও একদিন বাকি। ইতোমধ্যে আকাশ ছেয়ে মেঘের ভেলা, বৃষ্টিও চলছে কোথাও কোথাও। এটা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর (বর্ষা) প্রভাবে হচ্ছে।
শনিবার রাজধানীতে বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ৩৪ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ছিল নিকলীতে ৪৭ মিলিমিটার।
আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, “কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল হয়ে মৌসুমী বায়ু এখন তিন দিনের মধ্যে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আগামী দুই দিন বৃষ্টির প্রবণতাও বাড়বে। বলা যায়, যথাসময়ে বর্ষা এলো। স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হচ্ছে। মাসের শেষ দিকে স্বাভাবিক বন্যার আভাস রয়েছে।”
তিনি জানান, মৌসুমী বায়ু এখন দেশের উপর সক্রিয়। উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। সাগরে একটি লঘুচাপও ছিল কয়েক দিন আগে, এখন তা গুরুত্বহীন। তবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে।
“এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।”
করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ে মে মাসে ছিল ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ছোবল। তবে জুন মাসে তেমন কিছুর শঙ্কা নেই।
বিগত বছরগুলোতে বর্ষায় আনন্দের উল্টোপিঠে কিছু প্রাণহানির বেদনা সঙ্গী হয়েছে পাহাড়ি এলাকায়।
২০০৭ সালের ১১ জুন বর্ষণ আর পাহাড় ধসে বিপর্যয়ের নগরীতে পরিণত হয় চট্টগ্রাম। পাহাড়ি ধস আর কাদা মাটির নিচে পড়ে সাতটি স্থানে প্রাণ যায় ১২৭ জনের।
২০১২ সালে ২৬-২৭ জুন টানা বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল, ধস ও বজ্রপাতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও সিলেটে ৯৪ জনের প্রাণহানি হয়।
২০১৫ সালে কক্সবাজারে টানা ভারি বর্ষণ, ধস আর পাহাড়ি ঢলে ১৯ জনের প্রাণহানি হয়। এ সময় জেলার টেকনাফ, রামু, চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় সাতজন মারা যান।
২০১৭ সালে মধ্য জুনে ভারি বর্ষণে অন্তত ১৬০ জনের মৃত্যু হয় চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি ও মৌলভীবাজার জেলায়।
চট্টগ্রামে ইতোমধ্যে অবৈধভাবে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি উঠেছে।
বানের শঙ্কা জুন-জুলাইয়ের মধ্যে
টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে বর্ষার নিজেরও রয়েছে রুদ্র রূপ। বানের ফলে দুর্ভোগের শেষ থাকে না প্লাবিত এলাকায়।
মৌসুমী ভারী বর্ষণের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের কিছু স্থানে স্বল্পমেয়াদি বন্যার সৃষ্টি হতে পারে বলে চলতি মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, “বর্ষার সময়ে উজানের ঢলে বন্যার শঙ্কা তো আছেই। স্বাভাবিক ও স্বল্প মেয়াদি এ বন্যা হতে পারে। ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সংশ্লিষ্ট বাঁধ যাচাই ও সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।”
তিনি জানান, জুন-অক্টোবর বানের সময়। অভ্যন্তরীণ বৃষ্টিতে বন্যা হয় না। পাহাড়ি ঢলে দেশে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
“উজানে ভারি বৃষ্টির ট্রেন্ড আছে সামনে। জুলাইয়ে গত বছর বন্যা হয়েছে; এবার জুনের শেষ থেকে জুলাইয়ের শুরুতে একটা বন্যার শঙ্কা রয়েছে। ২০১৭ সালে অগাস্টেও বন্যা হয়েছে। এবার যমুনায় পানি বাড়লে তবেই স্বল্প মেয়াদি এ বন্যা হতে পারে।”
গেল বছর জুলাইয়ে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ২৮ জেলায় ৩০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২০১৭ সালে জুলাই-অগাস্টে দুই দফা বন্যা হয়। অগাস্টের বন্যায় দেশের ৩০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়।