প্রায় দুই মাসেও সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের সন্ধান পাওয়া যায়নি; এদিকে তার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
Published : 01 May 2020, 04:31 PM
ক্ষমতাসীন দলের একজন সংসদ সদস্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার পর গত ১০ মার্চ নিখোঁজ হন কাজল। এ ঘটনায় তার ছেলে মনোরম পলক চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মুন্সী আবদুল লোকমান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন বলে চকবাজার থানার ওসি মওদুত হাওলাদার জানিয়েছেন।
তদন্ত কর্মকর্তা অসুস্থ হয়ে পড়ায় মামলার তদন্তও স্থবির হয়ে আছে, যা হতাশা বাড়াচ্ছে কাজলের স্বজনদের।
মনোরম পলক শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রায় দুই মাস ধরে বাবাকে পাওয়া যাচ্ছে না। পরিবারের সবাই ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছি। কেউ কিছু বলতে পারছেন না বাবা কোথায় আছে। কিন্তু আমরা এখনও তাকে সুস্থভাবে ফেরত চাইছি।”
অসুস্থ হওয়ার আগেও তার বাবাকে খুঁজে বের করতে তদন্ত কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে মনোরমের।
তিনি বলেন, “এখন তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের জন্য আবেদন করতে হবে। কিন্তু এই পরিস্থিতির আগেও পুলিশের তেমন কোনো ভূমিকা চোখে পড়েনি।
“এখন সবাই করোনাভাইরাস থেকে নিজেদের সুস্থ রাখা নিয়ে চিন্তিত। আর আমরা চিন্তা করছি কবে, কীভাবে আমাদের পরিবারের একজন সদস্য আমাদের মাঝে ফিরে আসবে।”
এক সময় দৈনিক সমকাল ও বণিক বার্তায় ফটো সাংবাদিক হিসেবে কাজ করা কাজল ‘পক্ষকাল’ নামের একটি পাক্ষিক পত্রিকা সম্পাদনা করতেন।
যুব মহিলা লীগের নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার ওয়েস্টিন হোটেলকেন্দ্রিক কারবারে ‘জড়িত’দের নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কারণে মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, তাতে আসামির তালিকায় কাজলের নামও রয়েছে।
মতিউর রহমান চৌধুরী, মানবজমিনের সাংবাদিক আল আমিনের পাশাপাশি ৩০ জন ফেইসবুক ব্যবহারকারীকে সেখানে আসামি করা হয়েছে, যারা মানবজমিনের ওই প্রতিবেদন শেয়ার বা মন্তব্য করেছেন। কাজল তাদেরই একজন।
এক সময়ের জাসদ ছাত্রলীগ নেতা কাজল নিখোঁজ হওয়ার পর তার সন্ধান দাবিতে পুরনো রাজনৈতিক সহকর্মী, স্বজন ও সাংবাদিকরা মাঠে নেমেছিলেন।
তাদের আন্দোলনের মধ্যে এক পর্যায়ে কাজলের একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ভিডিওতে কাজল নিখোঁজ হওয়ার কিছুক্ষণ আগের চিত্র উঠে এসেছে বলে দাবি সংস্থাটির।
ওই ফুটেজে কাজলকে একটি জায়গায় রাস্তার পাশে মোটরসাইকেল রেখে পাশের কোথাও যেতে দেখা যায়। বেশ কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে মোটরসাইকেল চালিয়ে যান তিনি। এর মধ্যে তার ওই মোটরসাইকেল ঘিরে কয়েকজনকে তৎপরতা চালাতে দেখা যায়।
ওই ফুটেজ ধরে অনুসন্ধানের বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল লোকমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, ওই ভিডিওতে তারা ‘তেমন কিছু পাননি’।
“সেখানে কাজলকে কারও সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়নি।”
কাজলকে খুঁজে বের করার বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চাইলে চকবাজারের ওসি মওদুত হাওলাদার শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তদন্ত কর্মকর্তা করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ায় তদন্তে যতটুকু সময় দেওয়া দরকার পুলিশ সেটা করতে পারছে না। তাই এই মুহূর্তে মামলার তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।”
তবে এই পরিস্থিতির মধ্যে সাংবাদিক কাজলের সন্ধানে ‘যতটুকু কাজ করা সম্ভব পুলিশ করে যাচ্ছে’ বলে দাবি করেন তিনি।