করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে অবরুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ায় ত্রাণের দাবিতে রাজধানীর মিরপুরে রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন আটকেপড়া পাকিস্তানিদের ক্যাম্পের বাসিন্দারা।
Published : 21 Apr 2020, 03:35 PM
মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে মিরপুর ১২ নম্বরের ‘ই’ ব্লকের মুড়াপাড়া ক্যাম্পের কয়েকশ বাসিন্দা পল্লবী সরকারি মহিলা কলেজের সামনের রাস্তায় জড়ো হন।
শিশু থেকে শুরু করে ক্যাম্পের সব বয়সী বাসিন্দারা ত্রাণের দাবি জানান। ‘মুড়াপাড়া ক্যাম্পবাসীকে সাহায্য করুন’ প্ল্যাকার্ড হাতে শিশুদেরও রাস্তায় অবস্থান দিতে দেখা যায়।
বিক্ষোভকারীদের অধিকাংশের মুখেই মাস্ক, নারীদের কারও কারও মুখ ওড়নায় ঢাকা থাকলেও সামাজিক দূরত্ব মানতে দেখা যায়নি।
বিক্ষোভকারীরা জানান, প্রায় এক মাস ধরে তারা কোনো সরকারি সহায়তা পাচ্ছেন না। সরকারের তরফ থেকে কোনো উদ্যোগ না নেওয়া হলে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ারও কথা বলেন তারা।
সড়কে অবস্থান নেওয়া মুড়াপাড়া ক্যাম্পের বাসিন্দা ফরিদ বলেন, “কেউ দিতাছে না খাওন। শুধু স্লিপে আইডি কার্ডের নম্বর লিখা নিতাছে। কিন্তু কোনো খাওন দিতাছে না। আমাগো পোলাপান এহন খাওন না পাইয়া মরতাছে।”
এ ক্যাম্পের আরেক বাসিন্দা রোজিনা আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “পোলাপান না খায়া মরতাছে। মনে হয় যে, বিষ খায়া মইরা যাই, এমন অবস্থা হইছে। তাই আমরা এই জায়গায় বসছি। ঘরে কোনো খাবার নাই।”
“সরকার আমাদের বাচ্চাদের কাজ করতে দিতাছে না। বাইর হইলেই পুলিশ মারে। তাইলে খামু কি? খাওন দিয়া যান। খাওন তো দিতাছে না।”
খাদ্যাভাবে থাকায় বাধ্য হয়েই রাস্তায় নেমেছেন বলে জানান ক্যাম্পের আরেক বাসিন্দা কামাল হোসেন।
“কতদিন এইভাবে থাকন যায়? এক মাস ধরে কষ্ট করতাছি। বাচ্চারা তো খাওন চায়। কই থেইকা দিমু? সরকার দিতে না পারলে সবকিছু বন্ধ রাখল কেন? লকডাউন করল কেন? কেন থাকমু বাড়িতে? না খাইয়া কি থাকন যায়?”
সুমাইয়া বেগম বলেন, “প্রধানমন্ত্রী তো ঠিকই সাহায্য করতাছে। কিন্তু আমাগো কাছে তো সাহায্য আসে না। টিভিতে তো সবাই বড় বড় কথা কয়। না খায়া থাকলে তো এমনিতেই মইরা যামু। করোনা আর কি মারব?”
মিরপুরে পাকিস্তানিদের ক্যাম্পটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দুই নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত।
এ বিষয়ে জানতে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেনের মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করে বন্ধ পাওয়া গেছে।
পল্লবী থানার ডিউটি অফিসার নূরুল ইসলাম বলেন, “আমরা তাদের বোঝাচ্ছি, সরকারের সুযোগ-সু্বিধা তারা পাবেন। অনেকেই ত্রাণ পাচ্ছে, আবার অনেকেই পাচ্ছে না। সবাইকে এ আওতায় আনা হবে। সেজন্য ধৈর্য্য ধরার জন্য আমরা তাদের বোঝাচ্ছি।
“আমরা জনসমাগম করতে নিষেধ করলেও অনেকে তা শুনছে, না বেরিয়ে আসছে। তবে আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।”