করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সরকারি ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের প্রমাণ মেলায় ইউনিয়ন পরিষদের একজন চেয়ারম্যান এবং দুই সদস্যকে বরখাস্ত করেছে সরকার।
Published : 12 Apr 2020, 06:34 PM
এই তিনজন হলেন- চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ৩ নম্বর মীর্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুল আফসার, নাটোরের সিংড়া উপজেলার সুকাশ ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শাহিন শাহ এবং নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. কবির হোসেন।
তাদের তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করে রোববার আদেশ জারি করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে অফিস-আদালত, যানবাহন বন্ধ রেখে সবাইকে ঘরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ঘরবন্দি নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকার যে ত্রাণ দিচ্ছে, তাতে বিভিন্ন স্থানে অনিয়ম ঘটছে বলে অভিযোগ আসছে।
ত্রাণ বিতরণে যেসব জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মী অনিয়মে জড়িয়েছেন, বরখাস্তের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আগেই হুঁশিয়ার করা হয়েছিল।
অনিয়মে জড়িয়ে পড়া জনপ্রতিনিধি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণসহ প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠাতে শনিবার জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশও দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ।
মন্ত্রণালয় বলছে, হাটহাজারীর চেয়ারম্যান নুরুল আফসারের বিরুদ্ধে ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ হাটহাজারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবসারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগ এনে স্থানীয় আটজন ওয়ার্ড সদস্য গত ৪ এপ্রিল লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে।
এছাড়া গত ৬ এপ্রিল মীর্জাপুর ইউনিয়নের কয়েকটি পরিবারকে ত্রাণ দেওয়ার জন্য ডেকে নিয়ে ছবি তোলার পর ত্রাণ কেড়ে নেওয়ারও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
ত্রাণের জন্য ডেকে নিয়ে ছবি তুলে ত্রাণ কেড়ে নেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, “ত্রাণের জন্য ডেকে নিয়ে লোকজনকে চেয়ারম্যানের লোকজন ধাওয়া করেছে বলে আমার কাছে কয়েকজন অভিযোগ করেছিলেন। তবে ত্রাণ কেড়ে নেওয়ার বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি।
“ধাওয়ার বিষয়ে তার কাছ থেকে জানতে চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয়া হয়েছিল। তবে তার বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র করে’ অভিযোগ করা হচ্ছে বলে জানিয়ে চেয়ারম্যান উত্তর দিয়েছিল।”
সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেওয়ার পাশাপাশি আবসারকে কেন স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে না, তার কারণ দর্শানোর নোটিসও তাকে দেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগকে তার জবাব দিতে হবে।
নাটোরের সিংড়া উপজেলার সুকাশ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শাহিন শাহ নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বরাদ্দ ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিতরণ না করে অন্যত্র বিক্রির অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে জেলে আছেন।
আর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের
এছাড়া আরেক ইউপি সদস্য কবির হোসেন সরকারি ত্রাণ বিতরণ না করে তা আত্মসাৎ করেছেন এবং ‘গুজব ছড়িয়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের’ চেষ্টা করেছেন বলে ‘প্রমাণ’ পেয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
আদেশে বলা হয়েছে, “এই তিনজন জনপ্রতিনিধির অপরাধমূলক কার্যক্রমকে জনস্বার্থের পরিপন্থি হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী তাদের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।”
কেন তাদেরকে চূড়ান্তভাবে অপসারণ করা হবে না, তা আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে নিজ নিজ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগে জানাতে বলা হয়েছে।