বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার সরকারের ওপর আরো চাপ সৃষ্টির জন্য জার্মানিসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 26 Feb 2020, 09:36 AM
জার্মানির অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী জার্ড মুলার মঙ্গলবার গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাত করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
পরে প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার বৈঠকের বিভিন্ন বিষয় সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য এক বিরাট বোঝা এবং তারা সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করছে। মিয়ানমারকে দ্রুততার সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে তাদের নাগরিকদের ফেরত নিয়ে যেতে হবে।”
রাখাইন থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আরো জোরালো ভূমিকা নিতে জার্মানির প্রতি অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার আগমন কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণের জন্য একটি বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কেননা তারা সংখ্যায় স্থানীয় জনগণকে ছাড়িয়ে গেছে। অনেকেই (রোহিঙ্গারা) সন্ত্রাস কিংবা মানব পাচারে জড়িয়ে পড়ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, “দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ছাড়াও বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি করেছে যাতে তারা স্বেচ্ছায় তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু মিয়ানমার চুক্তিও মানছে না, রোহিঙ্গাদের ফেরতও নিচ্ছে না।”
রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়দের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই আশ্রয় শিবিরের চারপাশে বেড়া নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জার্মান মন্ত্রীকে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, তার সরকার মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের সব ধরনের সাহায্য দিচ্ছে। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের পরিচয়পত্র দেয়া হয়েছে।
জার্মান মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে কীভাবে বাংলাদেশকে আরও সহযোগিতা করা যায় তা বিবেচনা করবে তার দেশ।
প্রধানমন্ত্রী এবং জার্মান মন্ত্রীর বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।এর মধ্যে জার্মান বিনিয়োগ, তৈরি পোশাক শিল্প, বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের উন্নয়ন, পানি শোধনাগার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মত বিষয়ও ছিল বলে প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব জানান।
মুলার বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব গার্মেন্ট কারখানা এখন আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করছে। সরকার পোশাক শ্রমিকদের মজুরি ২২১ শতাংশ বাড়িয়েছে। শিল্প মালিকদের বুঝিয়ে কর্মীদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও নিশ্চিত করেছে।
বাংলাদেশি গার্মেন্ট পণ্যের জন্য বিদেশি ক্রেতাদের আরও বেশি দাম দেওয়া উচিৎ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ক্রেতা হিসেবে আপনাদেরকেও ভাবতে হবে আপনারা কত দিচ্ছেন।”
জার্মান মন্ত্রী বলেন, ৫০ কোটি ডলার ব্যয়ে মেঘনা ঘাটে একটি পানি শোধনাগার নির্মাণে সহযোগিতা দিচ্ছে তার দেশ, যাতে দক্ষিণ পূর্ব ঢাকাবাসী বিশুদ্ধ পানি পেতে পারে।
ওই প্রকল্পের কাজের গড়ি বাড়াতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চাইলে সরকারপ্রধান তাকে সেই আশ্বাস দেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেলকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তার অবসরের আগেই (নভেম্বর ২০২০) মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং এখানকার রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখার জন্য তার অবশ্যই বাংলাদেশ সফর করা উচিত।”
মুলার প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, “আপনি আপনার দেশে আপনার বাবার মতই ব্যাপক জনপ্রিয়।”
একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ে চতুর্থবারের মত প্রধানন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ায় শেখ হাসিনাকে বৈঠকের শুরুতেই অভিনন্দন জানান জার্মান মন্ত্রী।
তিনি মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষেও বাংলাদেশের মানুষ ও প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস এ সময় উপস্থিত ছিলেন।