আইজিআর মান্নানের বিরুদ্ধে ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ, পরিবারের অস্বীকার

নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক (আইজিআর) খান মো. আবদুল মান্নান ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বসুন্ধরায় সাততলা একটি বাড়ির তিনটি ফ্ল্যাট দখল করার অভিযোগ করেছেন এক ব্যক্তি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Dec 2019, 06:00 PM
Updated : 27 Dec 2019, 06:00 PM

শুক্রবার ঢাকার সেগুনবাগিচায় ক্রাইম রিপোর্টার্স বহুমুখী সমবায় সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকার দোহারের বাসিন্দা মোস্তাক আহমেদ এই অভিযোগ করেন।

তবে মান্নানের পরিবারের পাল্টা অভিযোগ, তিনটি ফ্ল্যাট বিক্রি করে রেজিস্ট্রি দলিল করে দেওয়ার পর মোস্তাক এখন তা অস্বীকার করছেন।

এমনকি আবদুল মান্নানের নিরাপত্তকর্মীদের মোস্তাক বের করে দিয়েছিলেন বলেও পাল্টা অভিযোগ করেছেন মান্নানের ভাই আবদুল হান্নান খান।

মোস্তাকের মত আবদুল মান্নানের বাড়িও দোহার উপজেলায়। তাদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকার কথাও বলেছেন দোহারের মুকসুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান খান।

সংবাদ সম্মেলনে মোস্তাক বলেন, এক সময় তিনি ব্যবসা করতেন। ১২ বছর আগে রহিমা হক নামে একজনের কাছ থেকে বসুন্ধরার এফ ব্লকের ২৪ নম্বর রোডের ৭৭৯ নম্বর প্লটটি তিনি কেনেন।

এরপর তিন কাঠার ওই প্লটে সাততলা ভবন করার চিন্তা করে তিনটি তলা (তিনটি ফ্লাট) হান্নানের কাছে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। সাড়ে পাঁচ বছর আগে তিনটি ফ্ল্যাট সাড়ে তিন কোটি টাকা দামে মান্নানের কাছে বিক্রির জন্য তিনি চুক্তিবদ্ধ হন।

“চুক্তির সময় আইজিআর মান্নান নগদ ১৪ লাখ টাকা আমাকে দিয়েছেন। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বাড়ি নির্মাণ করা অবস্থায় বাকি টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু বার বার চাওয়ার পরও আর কোনো টাকা দেননি তিনি।”

মোস্তাকের ভাষ্য, মান্নানের কাছ থেকে প্রতিশ্রুত টাকা না পেয়ে ব্যাংক থেকে এক কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে তিনি বাড়ির কাজ এগিয়ে নেন।

“এরপর মান্নান তার লন্ডন প্রবাসী ভাই হারুন-অর-রশিদের নামে জাল দলিল তৈরি করে তাকে ওই বাড়ির তিনটি ফ্ল্যাটের মালিক বলে দাবি করেন।”

ওই দলিলের বিরুদ্ধে আদালতে একটি দেওয়ানি মামলা করেছেন জানিয়ে মোস্তাক বলেন, আদালত বিবাদীদেরকে সম্পত্তি দখল ও হস্তান্তরে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেয়।

“আদালতের ওই নির্দেশনার মধ্যে গত ২৪ ডিসেম্বর আইজিআর মান্নান ও তার ভাই হান্নান খান এবং ভাগ্নে মো. শাহিন সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিয়ে গেইটের চারটি তালা ভেঙে বাড়িতে প্রবেশ করে এবং তাদের প্রতিনিধিদের সেখানে নিযুক্ত করে।”

তখন জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সাহায্য চাইলে কিছুক্ষণের মধ্যে একজন পুলিশ অফিসার এসে বহিরাগদের বের করে দেন বলে দাবি করেন মোস্তাক।

তিনি বলেন, “এর কিছুক্ষণ পর আবারও আইজিআরের লোকদেরকে বাড়িতে প্রবেশের সুযোগ দিয়ে ভাটারা থানার ওসির সাথে আমাকে যোগাযোগ করতে বলেন উপস্থিত পুলিশ অফিসার।”

পরে ওসির দপ্তরে গিয়ে এ বিষয়ে অভিযোগ দিতে চাইলে তা নেওয়া হয়নি দাবি করে মোস্তাক বলেন, ২৫ ডিসেম্বর তিনি এ বিষয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

“এখন আমি প্রাণভয়ে আমার বাড়িতে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না। এই সংবাদ সম্মেলন করার কারণে হয়ত আমাকের তারা প্রাণে মেরে ফেলতে পারে। আমি এর যথাযথ বিচার চাই।”

মোস্তাকের অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে আইজিআর আবদুল মান্নানকে ফোন করলেও তিনি ধরেননি। তার নম্বরে এসএমএস পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে মান্নানের ভাই ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান খান অভিযোগ অস্বীকার করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মোস্তাক আমাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। তিনি তিনটি ফ্ল্যাট বিক্রি করে রেজিস্ট্রি দলিল করে দিয়ে তা আবার অস্বীকার করছে। আমাদের নিরাপত্তাকর্মীদের সে বের করে দিয়েছে। পরে আমরা পুলিশের সহায়তায় সেখানে নিরাপত্তাকর্মী দিয়ে আমাদের কাজ করছি।”

চুক্তিপত্র অনুসারে সাড়ে তিন কোটি টাকার মধ্যে ১৪ লাখ টাকা ছাড়া আর কোনো টাকা পরিশোধ করেছিলেন কিনা জানতে চাইলে হান্নান বলেন, “নির্ধারিত সময়ে চুক্তি অনুসারে টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। তিনি যে অভিযোগ করেছেন তা মিথ্যা।”

ওই জমির ওপর আদালতের স্থিতাবস্থা জারির আদেশ থাকার যে দাবি মোস্তাক করেছেন, তা দুই বছর আগের বলে দাবি করেন হান্নান।

তিনি বলেন, “আমাদের আবেদনে স্থিতাবস্থা তুলে নিয়েছে আদালত। এখন এর কোনো কার্যকারিতা নেই।”

মোস্তাক আইজিপির কাছে লিখিত অভিযোগ করার যে তথ্য দিয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম তা স্বাধীনভাবে যাচাই করে দেখতে পারেনি।