মোহামেডানসহ মতিঝিলের চারটি ক্লাবে পুলিশের অভিযানে ক্যাসিনো মিললেও কোনো জুয়াড়ীকে পাওয়া যায়নি।
Published : 22 Sep 2019, 08:07 PM
চার দিন আগে পাশের দুটি ক্লাবে র্যাবের অভিযানের পর থেকে এই ক্লাবগুলোতে আসর বসছিল না বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।
ক্লাবকেন্দ্রিক জুয়ার আখড়া বন্ধে গত ১৮ সেপ্টেম্বর র্যাব মতিঝিলের ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ও ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে অভিযান চালিয়েছিল। ওই অভিযানে ক্লাবগুলোতে অবৈধ ক্যাসিনো থাকার বিষয়টি প্রকাশ পায়।
প্রথম দিনের অভিযানে দুই ক্লাবের ক্যাসিনো থেকে দেড় শতাধিক জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইয়ংমেন্স ক্লাবের সভাপতি খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকেও তার গুলশানের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তারপর আরও কয়েকটি ক্লাবে অভিযান চালায় র্যাব। রোববার মতিঝিলের ক্লাবে হানা দেওয়ার মধ্য দিয়ে এই অভিযানে নাম লেখায় পুলিশও।
এদিন দুপুরের পর মোহামেডান ছাড়াও ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব ও আরামবাগ ক্রীড়া সংঘে চলে অভিযান।
অফিস পাড়া মতিঝিল এই ক্রীড়া ক্লাবগুলোকে কেন্দ্র করে রাতে জমজমাট থাকলেও এই অভিযান শুরুর পর গত কয়েকদিন ধরে সুনসান ছিল বলে স্থানীয় বাসিন্দা ও দোকানিরা জানান।
জুয়ার আসরকে কেন্দ্র করে রাস্তা ও ফুটপাতে গড়ে ওঠা চা ও খাবারের দোকানগুলোতে কলসি ভরে পানি সরবরাহকারী আলেয়া বেগম নামে মধ্যবয়সী এক নারীর কথায় জানা যায় ক্লাবগুলোতে কারও না থাকার কথা।
পুলিশ দিলকুশা, আরামবাগ ক্লাবে অভিযান চালিয়ে যখন ভিক্টোরিয়া ক্লাবের দিকে যাচ্ছিল, তখন তিনি বলে ওঠেন, “ক্লাবে তো কেউ নাই, পুলিশ কাউকে পাইব না।”
জানতে চাইলে আলেয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্যার, আজ ক’দিন ধরে ক্লাবগুলোতে কেউ নাই।”
আসর না বসায় সেখানকার দোকানিদের কথায়ও ছিল হতাশার সুর।
শান্তা বিরানি হাউজের মালিক মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। রাতে খরিদ্দার পাওয়া যাচ্ছে না।”
সাদ্দাম স্টোর, মায়ের দোয়া রেস্টুরেন্টসহ অন্যান্য দোকানের কর্মীরাও বলেন, গত বুধবার থেকে রাতে ক্লাবগুলোতে আর কেউ আসছেন না।
চারটি ক্লাবে গিয়ে দেখা যায়, রান্না ঘরে পড়ে থাকা খাবার পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
ডিএমপির মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার মিশু বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কার্যত গত বুধবার থেকে ক্লাবগুলোতে লোকজন আসা-যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, আর কর্মীরাও গা ঢাকা দিয়েছে।
প্রথম দিনের অভিযানে শুধু ইয়ংমেন্স ক্লাবেই কর্মীসহ ১৪২ জনকে আটক করেছিল র্যাব। সেদিনের অভিযানে আটক মোট ১৮২ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছিল র্যাব।
তারপর থেকে মতিঝিলের ক্লাবগুলোতে আনাগোনা কমে যায়; যদিও চারটি ক্লাবেই রুলেট, বোর্ড, চিপস, তাসসহ জুয়ায় নানা উপকরণ পাওয়া গেছে।
পুলিশের নাকের ডগায় কীভাবে এসব ক্যাসিনো এতদিন চলছিল- প্রশ্ন করা হলে মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যখনই আমাদের কাছে তথ্য এসেছে, তখনই আমরা অভিযান চালিয়েছি।”
এর আগেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জুয়ার আখড়া বন্ধে অভিযান চালিয়েছিল বলে দাবি করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা; তবে তাতে যে কোনো ফল আসেনি, তা এবারের অভিযানেই স্পষ্ট।
মতিঝিল এলাকায় ১২টি ক্লাব রয়েছে; তবে অন্য কয়েকটিতে জুয়ার আলামত না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন মতিঝিল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. রফিকুল ইসলাম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অন্য ক্লাবগুলোতে খোঁজ নিয়েছি, কিন্তু তেমন কিছু পাওয়া যায়নি।”
ওয়ারী ক্লাবের কর্মচারী সঞ্জিত চন্দ্র মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ক্লাবে ক্যাসিনো চলে না। ক্লাবের সামনের মাঠের জায়গায় গাড়ি রাখার জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। আর দাতারা যে টাকা দেয়, তা দিয়ে ক্লাব চলে।”
অভিযান চালিয়ে যেসব ক্লাবে ক্যাসিনো পাওয়া গেছে, সেগুলো ক্রীড়া ক্লাব হিসেবেই পরিচিত।
প্রথম দিন চারটি ক্লাবে অভিযান চালানোর পর র্যাবের নির্বাহী হাকিম সারোয়ার আলম বলেছিলেন, “নামে ক্লাব হলেও এগুলোতে কোনো ক্রীড়া সামগ্রী বা কোনো খেলোয়াড়কে দেখা যায়নি। বিভিন্ন কক্ষজুড়ে ছিল ক্যাসিনোর বোর্ড, ডার্ট বোর্ডসহ জুয়ার সামগ্রী এবং জুয়াড়ি। ছিল মদ, বিয়ারসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক।”