মোহামেডানসহ চার ক্লাবে ক্যাসিনোর সরঞ্জাম

র‌্যাবের পর এবার পুলিশ জুয়ার আসর বন্ধে মাঠে নেমেছে, ঢাকার মতিঝিল-আরামবাগ এলাকার চার ক্লাবে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে ক্যাসিনোর সরঞ্জাম, মদ আর নগদ টাকা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2019, 10:13 AM
Updated : 22 Sept 2019, 07:20 PM

রোববার দুপুরে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে একযোগে এই অভিযান শুরু হয় বলে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার শিবলী নোমান জানান।

এর মধ্যে ভিক্টোরিয়া ক্লাব থেকে বিভিন্ন ধরনের জুয়া খেলার নয়টি বোর্ড, এক লাখ টাকা, বিপুল পরিমাণ তাস, জুয়ায় ব্যবহৃত চিপস ও মদ পাওয়া গেছে। 

মোহামেডানে পাওয়া গেছে দুটো রুলেট টেবিল, নয়টি বোর্ড, বিপুল পরিমাণ কার্ড, ১১টি ওয়্যারলেস সেট ও ১০টি বিভিন্ন ধরনের চাকু।

আরামবাগ ও দিলকুশা ক্লাবেও বাকারা ও রুলেট টেবিলসহ বিভিন্ন জুয়ার সরঞ্জাম পেয়েছে পুলিশ। তবে সবগুলো ক্লাবই বন্ধ ছিল বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এসব ক্লাব থেকে ১ লাখ টাকাও উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশের নাকের ডগায় কীভাবে এসব ক্যাসিনো এতদিন চলে আসছে সেই প্রশ্নের জবাবে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ কমিশনার আনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যখনেই আমাদের কাছে তথ্য এসেছে, তখনই আমরা অভিযান চালিয়েছি। এর আগেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবৈধ জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে।”

চারটি ক্লাবে অভিযান চালিয়ে পুলিশ যে সব সামগ্রী জব্দ করেছে, তা আদালতের অনুমতি নিয়ে ধ্বংস করে ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন মতিঝিল থানার ওসি ওমর ফারুক।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে সব জুয়ার বা ক্যাসিনোর সরঞ্জাম পাওয়া গেছে, তা আদালতকে অবহিত করে ধ্বংসের অনুমতি চাওয়া হবে। মদ ও এক লাখ টাকা পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়ার ঘটনায় করণীয় কী, তা জানতে চেয়ে আদালতে আবেদন করা হবে।”

এক প্রশ্নের জবাবে ওসি ফারুক বলেন, এই চারটি ক্লাবে অভিযানের বিষয়ে এখন কোনো মামলা হচ্ছে না।

“এর সাথে কারা জড়িত ছিল, তা তদন্ত করে দেখার পর আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

গত সপ্তাহে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে যুবলীগ নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ঢাকায় যুবলীগ নেতাদের ‘৬০টি ক্যাসিনো চালানোর’ খবর আসে সংবাদমাধ্যমে।

এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই গত বুধবার বিকালে গুলশান ২ নম্বরের ৫৯ নম্বর সড়কে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া বাসা এবং ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে একযোগে অভিযান চালায় র্যাব। শাজাহানপুরের রেলওয়ে কলোনিতে বেড়ে ওঠা খালেদ ফকিরাপুলের ওই ক্লাবের সভাপতি।

কয়েক ঘণ্টার অভিযানে ওই ক্লাবে ক্যাসিনো বসিয়ে জুয়ার আড্ডা চালানোর বিপুল আয়োজন পাওয়া যায়। সেখান থেকে ২৪ লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয়। আর গুলশানের বাসা থেকে খালেদকে গ্রেপ্তারের পর তার বাসায় ৫৮৫টি ইয়াবা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা এবং অবৈধ অস্ত্র পাওয়ার কথা জানায় র্যাব।

ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবের পাশাপাশি ওই এলাকার ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, বঙ্গবন্ধু এভিনিউর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র এবং বনানীর আহমেদ টাওয়ারে গড়ে তোলা একটি ক্যাসিনোতেও র্যাবের অভিযান চলে।

দেশের বিভিন্ন ক্লাবে অবৈধভাবে জুয়ার আসর বসানোর অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। এ নিয়ে আদালতে মামলাও হয়েছে। তবে বাংলাদেশেও যে স্লট মেশিন, রুলেট টেবিলের মত সরঞ্জাম নিয়ে পুরোদত্তর ক্যাসিনো চলে, সে খবর সাধারণ মানুষের কাছে নতুন।

পুলিশের নাকের ডগায় কীভাবে এসব ক্যাসিনো এতদিন চলে আসছে সেই প্রশ্ন ওঠে ইয়ংমেনস ক্লাবে র‌্যাবের অভিযানের পর।

এর দুই দিনের মাথায় শুক্রবার ঢাকার কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ও ধানমণ্ডি ক্লাবেও অভিযান চালায় র্যাব। কলাবাগান ক্রীড়াচক্র থেকে ক্লাব সভাপতি কৃষক লীগ নেতা সফিকুল আলম ফিরোজসহ পাঁচজনকে অস্ত্র-গুলি ও ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। ধানমণ্ডি ক্লাবের বারে কী পরিমাণ মদের মজুদ আছে, সেই হিসাব জমা দিতে বলা হয়।

শনিবার চট্টগ্রামের পাঁচটি ক্লাবে একযোগে অভিযান শেষে তিনটি ক্লাবে জুয়ার আসর চালানোর প্রমাণ পাওয়ার কথা জানানো হয় র‌্যাবের পক্ষ থেকে।