ধানমণ্ডির কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে অভিযান চালিয়ে ক্লাবের সভাপতি কৃষকলীগ নেতা সফিকুল আলম ফিরোজসহ পাঁচজনকে অস্ত্র-গুলি ও ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
Published : 20 Sep 2019, 09:17 PM
ওই ক্লাবেও যে ক্যাসিনো চালানো হত, অভিযানে তার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন র্যাব-২ এর অধিনায়ক আশিক বিল্লাহ।
কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের পর র্যাব সদস্যরা নির্বাহী হাকিম গাওসুল আযমের নেতৃত্বে ধানমণ্ডির মেট্রো শপিং মলের ছয়তলায় ধানমন্ডি ক্লাবেও অভিযান চালান। সেখানে একটি বার থাকলেও অভিযানের সময় তা বন্ধ ছিল বলে পরে জানানো হয়।
এলিফ্যান্ট রোডের অ্যাজাক্স ক্লাব ও কারওয়ানবাজারের মৎস্যজীবী ক্লাবও র্যাব সদস্যরা ঘিরে রেখেছিলেন দুপুরের পর থেকে। তবে র্যাব-২ এর অধিনায়ক আশিক বিল্লাহ রাত ১০টার পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই দুই ক্লাবে তারা অভিযানে যাচ্ছেন না।
শুক্রবার বিকালে নিকেতনে ঠিকাদার জি কে শামীমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে র্যাবের অভিযান শেষ হওয়ার আগেই কলাবাগান মাঠের পাশে র্যাবের আরেকটি দলের অবস্থান নেওয়ার খবর আসে। একই সময়ে ধানমণ্ডি ও অ্যাজাক্স ক্লাবের বাইরেও রাব সদস্যদের তৎপর হতে দেখা যায়।
কলাবাগান ক্লাব থেকে সভাপতি সফিকুল আলম ফিরোজকে আটক করে র্যাব-২ সদর দপ্তরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব। পরে তাকে সঙ্গে নিয়ে র্যাবের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওই ক্লাবে অভিযান শুরু হয়।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে অভিযান শেষ করে বেরিয়ে এসে তিনি বলেন, কলাবাগান ক্লাবেও একসময় ক্যাসিনো চলতো, এটা তারা দেখেই বুঝতে পেরেছেন।
“হয়ত কোনো একভাবে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তারা ক্যাসিনোটা এখান থেকে সরিয়ে ফেলেছে। ক্যাসিনোর অন্যান্য সরঞ্জাম আমরা পেযেছি। এখানে আমরা বিদেশি কয়েন, প্লেইং কার্ড, ক্যাসিনোতে যেরকম স্কোর বোর্ড থাকে, সেরকম স্কোরবোর্ড আমরা এখান থেকে উদ্ধার করেছি।”
আশিক বিল্লাহ বলেন, লাইসেন্সবিহীন একটি বিদেশি অস্ত্র, তিন রাউন্ড গুলি এবং ‘হলুদ রঙের নতুন ধরনের’ ইয়াবা তারা সফিকুলের অফিস থেকে উদ্ধার করেছেন।
কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বায়রার সিনিয়র সহ-সভাপতি সফিকুল আলম ফিরোজ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-৫ (শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ) আসনে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
সফিকুলের পাশাপাশি তার সহযোগী লিটন মিয়া, আনোয়ার, হাফিজুর রহমান ও হারুণকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়ে র্যাব অধিনায়ক বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হবে।”
ঘণ্টাখানেক পর র্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার পুলিশ সুপার মো. শাহাবুদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ধানমণ্ডি ক্লাবে তারা তাৎক্ষণিকভাবে অবৈধ কিছু পাননি, কাউকে গ্রেপ্তারও করেননি।
“এই ক্লাবে একটি বার দেখা গেছে। তাদের বার চালানোর লাইসেন্স আছে। তবে অভিযানের সময় সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে কতটুকু স্টক রাখতে পারবে এবং কতটুকু আছে এটা দেখার সুযোগ হয়নি।”
এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, বারে মদের মজুদের বিষয়ে ক্লাব কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হিসাব দিতে বলা হয়েছে। তার আগ পর্যন্ত ওই বার বন্ধ থাকবে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে ক্লাবের সভাপতি মোশাররফ হোসেন কাজলের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
কলাবাগানে অভিযান শুরুর আগে শুক্রবার সকাল থেকে নিকেতনে ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমের অফিসে অভিযান চালায় র্যাব। তিনি নিজেকে যুবলীগের কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হিসেবে পরিচয় দিতেন।
ওই অফিস থেকে নগদ প্রায় দুই কোটি টাকা, পৌনে দুইশ কোটি টাকার এফডিআর, আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় শামীম ও তার সাত দেহরক্ষীকে।
কয়েক ঘণ্টার অভিযানে ওই ক্লাবে ক্যাসিনো বসিয়ে জুয়ার আড্ডা চালানোর বিপুল আয়োজন পাওয়া যায়। সেখান থেকে ২৪ লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয়।
আর গুলশানের বাসা থেকে খালেদকে গ্রেপ্তারের পর তার বাসায় ৫৮৫টি ইয়াবা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা এবং অবৈধ অস্ত্র পাওয়ার কথা জানায় র্যাব।
ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবের পাশাপাশি ওই এলাকার ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, বঙ্গবন্ধু এভিনিউর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র এবং বনানীর আহমেদ টাওয়ারে গড়ে তোলা একটি ক্যাসিনোতেও র্যাবের অভিযান চলে।
দেশের বিভিন্ন ক্লাবে অবৈধভাবে জুয়ার আসর বসানোর অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। এ নিয়ে আদালতে মামলাও হয়েছে। তবে বাংলাদেশেও যে স্লট মেশিন, রুলেট টেবিলের মত সরঞ্জাম নিয়ে পুরোদত্তর ক্যাসিনো চলে, সে খবর সাধারণ মানুষের কাছে নতুন।
ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৬০টি জায়গায় ক্যাসিনো বানিয়ে জুয়ার আসর চালানো হয় এবং এর পেছনে রাজনৈতিক নেতাদের মদদ রয়েছে বলে এরপর খবর আসে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।
র্যাবের নির্বাহী হাকিম সারোয়ার আলম সেদিনই বলেছিলেন, ক্যাসিনা বা জুয়ার আখড়া বন্ধে এই ধরনের অভিযান চলবে।