রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দ্বিতীয় চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর শুক্রবারও তিনি বলেছেন, “আমরা এখনও আশাবাদী।”
গতবছর নভেম্বর প্রথম দফার চেষ্টা ভেস্তে যাওয়ার পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য ২২ অগাস্ট দিন ঠিক হয়েছিল।
কিন্তু নাগরিকত্বসহ চারটি শর্তের কথা তুলে বৃহস্পতিবার নির্ধারিত দিনে একজন রোহিঙ্গাও স্বেচ্ছায় মিয়ানমারের রাখাইনে ফিরে যেতে রাজি হয়নি।
রাখাইনের অধিবাসী হিসাবে ১০৩৭টি রোহিঙ্গা পরিবারের যে তালিকা মিয়ানমার পাঠিয়েছিল, সেটি ধরে প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য গত কয়েকদিন ধরে সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন ইউএনএইচসিআর ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা। তারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে যেতে আগ্রহী কিনা তা জানতে চাওয়া হচ্ছে তাদের কাছে।
সেই প্রক্রিয়া এখনও চলছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, “মিয়ানমার এখনও তাদের (রোহিঙ্গা) মনে আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারেনি। কিন্তু এটা তাদেরই দায়িত্ব। তারা (রোহিঙ্গা) মিয়ানমারকে বিশ্বাস করে না। এ বিষয়টিকে অবশ্যই মিয়ানমারের আমলে নিতে হবে।”
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শুক্রবার ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিবিদদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ কমিটির এক আলোচনা সভার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য বাংলাদেশ সব সময়ই প্রস্তত।
“আমরা মিয়ানমারকে আবারও মনে করিয়ে দেব যে তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে। সুতরাং সেজন্য যা যা দরকার তা তাদের করতে হবে। আমরা বিশ্বকে বলব যে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টাটা আমরা করছি।”
আবদুল মোমেন বলেন, এখন কক্সবাজারের বদলে রাখাইনের দিকে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মনোযোগ দেওয়া উচিৎ। কক্সবাজারে যে রোহিঙ্গারা আছে বাংলাদেশ তাদের দিকটা দেখছে।
রোহিঙ্গাদের দাবি, প্রত্যাবাসনের জন্য আগে তাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে। জমি-জমা ও ভিটেমাটির দখল ফেরত দিতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রাখাইনে তাদের সঙ্গে যা হয়েছে, সেজন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “মিয়ানমারকে এ বিষয়গুলো দেখতে হবে। তারা যদি আমলে না নেয়, তাহলে আতঙ্ক থেকেই রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে চাইবে না।
“এটা মিয়ানমারেরই দায়িত্ব। তাদের নাগরিকদের আশ্বস্ত করা তাদেরই কাজ।”
মোমেন বলেন, বাংলাদেশ একটি আন্তর্জাতিক কমিশন গঠনের কথাও ভাবছে, যারা রাখাইনের পরিস্থিতির উন্নয়নে কাজ করবে।
“আমি ইউএনএইচসিআর এবং অন্যদের সঙ্গে কথা বলেছি।… বলেছি তাদের এখানে থাকার দরকার নেই, বরং তারা রাখাইনে যাক।”
২০১৭ সালে রাখাইনে দমন-পীড়ন শুরুর পর থেকেই ওই এলাকায় আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছিল মিয়ানমার। আন্তর্জাতিক চাপে গতবছর তা কিছুটা শিথিল করা হলেও এখনও সেখানে যাওয়া আসার সুযোগ উন্মুক্ত করা হয়নি।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ইউএনএইচসিআর বলেছে, রাখাইনের যেসব জায়গা থেকে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে এবং ফিরে যাওয়ার পর যেখানে তাদের রাখা হবে- প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে সেসব জায়গায় জাতিসংঘের এই দুই সংস্থার প্রতিনিধিদের যাতায়াতের সুযোগ দেওয়াটা জরুরি, যাতে তারা রোহিঙ্গাদের আস্থা ফেরানোর জন্য কাজ করতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘও তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারে না।
“রাখাইনে ওই রেষারেষি বহুদিন ধরেই ছিল। কিন্তু তারা এটা গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি। সেই রেষারেষি কমানোর কাজে জাতিসংঘ নেতৃত্বের ভূমিকা নিতে পারে।”