চলমান বন্যায় ১৯ দিনে পানিতে ডুবে, সাপের কামড়ে, বজ্রপাত ও অন্যান্য কারণে ১১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
Published : 28 Jul 2019, 10:24 PM
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে।
জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে বন্যার কারণে দুর্ভোগের পর এখন প্রতিদিন বহু মানুষ বিভিন্ন রোগের শিকার হচ্ছেন। এরইমধ্যে প্রায় ১৭ হাজার মানুষ ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেল্থ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জানান, ১০ জুলাই থেকে রোববার পর্যন্ত দুর্গত এলাকায় বিভিন্ন কারণে (ডায়রিয়া, সাপে কাটা, পানি ডোবা ইত্যাদি) ১১৯ জন মারা গেছেন।
এর মধ্যে জামালপুরে সর্বোচ্চ ৩৬ জন, নেত্রকোণায় ১৯ জন, চট্টগ্রামে একজন, কক্সবাজারে একজন, বগুড়ায় আটজন, গাইবান্ধায় ২০ জন, লালমনিরহাটে চারজন, নীলফামারীতে দুইজন, সুনামগঞ্জে পাঁচজন, কুড়িগ্রামে চারজন, টাঙ্গাইলে ১১ জন, ফরিদপুরে একজন এবং শেরপুর, সিরাজগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুইজন করে মারা গেছে।
তাদের মধ্যে পানিতে ডুবে ৯৮ জন, বজ্রপাতে ৭ জন, সাপের কামড়ে ১০ জন, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ১ জন এবং অন্যান্য কারণে তিনজনের মৃত্যু রয়েছে।
গেল তিন সপ্তাহে (১০ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই) বন্যা দুর্গত এলাকায় ১৬ হাজার ৯৫৯ জন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ২০৯ জন অসুস্থ হয়েছেন, তাদের দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
চলমান বন্যায় দেশের ২৮ জেলায় ৬০ লাখ ৭৪ হাজার ৪১৫ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন।
তিনি রোববার সাংবাদিকদের বলেন, ৭৬টি উপজেলাকে ‘দুর্গত এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই হাজার ৪৬০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে জানিয়ে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বন্যা দীর্ঘায়িত হবে না। পানি দুয়েক দিনের মধ্যে কমে যাবে। বন্যা দীর্ঘমেয়াদি হলেও ত্রাণের কোনো সমস্যা হবে না।”
দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি শনিবার থেকে কমছে জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, গত সপ্তাহের শেষ থেকে সারা দেশে এবং দেশের উজানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে গেছে। এই মুহূর্তে সব জায়গায় পানি হ্রাস পাচ্ছে।
“এই সপ্তাহে দেশে এবং উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই এবং আগামী সপ্তাহেও ভারী বৃষ্টিপাতের লক্ষণ নেই। দুই সপ্তাহের মধ্যে বড় বন্যার ঝুঁকি দেশে নেই।”
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামসুদ্দিন আহমেদ জানান, আগামী ১০ দিন ভারতীয় অংশে বাংলাদেশের উজানে বিশেষ করে নেপাল, আসাম, মিজোরাম ও মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম। তবে হালকা ধরনের বৃষ্টিপাত হবে। একই সাথে বাংলাদেশেরও বিভিন্ন অংশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হবে।
সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানান, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত লঘুচাপটি একই এলাকায় বিরাজ করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে গভীর সঞ্চালণশীল মেঘমালা তৈরি অব্যাহত রয়েছে।
তিনি জানান, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।