নাইকো দুর্নীতি মামলার আদালত স্থানান্তরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার করা রিট আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ।
Published : 23 Jun 2019, 11:04 PM
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের অবকাশকালীন হাই কোর্ট বেঞ্চ গত ১১ জুন নিয়মিত বেঞ্চে আবদনটি শুনানির আদেশ দিয়েছিল।
পরে গত সপ্তাহে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাই কোর্ট বেঞ্চে আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করেন কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী।
রোববার মামলাটি আবেদনটির শুনানির জন্য কার্যতালিকায় এলে মামলাকারী দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবীর আপত্তিতে তা বাদ দেওয়া হয়।
খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে ছিলেন এ জে মোহাম্মদ আলী ও কায়সার কামাল। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।
কায়সার কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুদকের আইনজীবী আদালতে বলেছেন, এটা দুদকের মামলা। দুর্নীতি দমন কমিশনের যে ডেজিগনেটেড বেঞ্চ রয়েছে, আবেদনটি সেখানে দেওয়ার জন্য। আমরা বলেছি, আমাদের আবেদনটা দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলার বিরুদ্ধে না। এটাতে সরকারি একটা প্রজ্ঞাপনকে চ্যলেঞ্জ করা হয়েছে।
“তখন আদালত বললেন যে, বিতর্ক এড়ানোর জন্য আমরা আবেদনটি না শুনে আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে বাদ করে দিলাম।”
সোমবার দুদক সংশ্লিষ্টে বেঞ্চে আবেদনটি উপস্থাপন করা হবে বলে জানান খালেদার এই আইজীবী।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুনানির সময়ই আমি আপত্তি জানিয়ে বলেছি এটা দুদক সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে শুনানি হওয়া দরকার। তখন আদালত আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছে।”
নাইকো দুর্নীতি মামলায় খালেদার বিচারের জন্য বিশেষ আদালত পুরান ঢাকার কারাগার থেকে সরিয়ে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়ার সরকারি আদেশের বিরুদ্ধে গত ২৬ মে হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করা হয়েছিল।
পরে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের অবকাশকালীন হাই কোর্ট বেঞ্চ ওই রিট আবেদনের শুনানিতে নাইকো মামলা আমলে নেওয়ার আদেশ এবং আদালত স্থানান্তরের গেজেটের কপি হলফনামা আকারে জমা দিতে বলেছিল খালেদার আইনজীবীদের।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী গত মঙ্গলবার নাইকো মামলা আমলে নেওয়ার আদেশের কপি হলফনামা আকারে জমা দেন। কিন্তু আদালত স্থানান্তরের গেজেটের কপি পাননি জানিয়ে বলেন, এ বিষয়ে বিশদ শুনানি প্রয়োজন।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব তখন বলেছিলেন, “আপনারা জানেন আমাদের এটা অবকাশকালীন বেঞ্চ। এই অবকাশকালীন বেঞ্চের সময়ের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অনেক কিছু বিস্তারিত শুনানি করা সম্ভব হয় না।”
এরপর খালেদার আইনজীবীদের কাছ থেকে স্পষ্ট কোনো জবাব না পেয়ে আদালত এই আবেদনটি শুনানির জন্য হাই কোর্টের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেয়।
দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছিল পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের পরিত্যক্ত কারাগারে। তার বিরুদ্ধে নাইকোসহ অন্য কয়েকটি মামলার বিচারও সেখানেই চলছিল।
চিকিৎসার জন্য তাকে গত ১ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়, সুস্থ হলে খালেদাকে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হবে।
এরপর খালেদার বিচারে আদালত স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত জানিয়ে মে মাসের মাঝামাঝি গেজেট জারি হলে প্রথমে উকিল নোটিস পাঠিয়ে পরে হাই কোর্টে আসেন খালেদার আইনজীবীরা।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর হাতে তুলে দিয়ে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করার অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক।
খালেদা জিয়া ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক মন্ত্রী মওদুদ আহমদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। মামলাটি বর্তমানে অভিযোগ গঠনের শুনানি পর্যায়ে আটকে আছে।