ডাকসু নির্বাচনে এবার ৪৩ হাজার ভোটারের বিপরীতে প্রার্থী সব মিলিয়ে ৭৩৮ জন; এদের মধ্য থেকে বাছাই করে প্রত্যেক ভোটারকে ৩৮ জনকে ভোট দিতে হবে।
Published : 05 Mar 2019, 09:14 PM
এই ভোটগ্রহণের জন্য যে ছয় ঘণ্টা সময় রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ; তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করছে ছাত্রলীগ বাদে আর সব সংগঠন।
বাম সংগঠনের নেতাদের অভিযোগ, সরকার সমর্থক ছাত্রলীগকে সুবিধা দিতেই ভোটের সময় কম রেখেছে প্রশাসন।
অন্যদিকে প্রশাসনের পক্ষে দাঁড়িয়ে ছাত্রলীগ নেতারা বলছেন, হিসাব-নিকাশ করেই ভোট গ্রহণের এই সময় ঠিক হয়েছে বলে তারা মনে করছেন।
ডাকসুর সভাপতি উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানও বলছেন, সব কিছু বিচার-বিবেচনা করেই ভোটগ্রহণের সময় ঠিক করা হয়েছে।
তিন দশক পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল ছাত্র সংসদের নির্বাচন হচ্ছে। আগামী ১১ মার্চ সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে।
ডাকসুর ২৫টি পদে ১২টি প্যানেল থেকে ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মোট ২২৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ভিপি প্রার্থী ২১ জন এবং জিএস প্রার্থী ১৪। এর সঙ্গে ১৮টি হল সংসদে ১৩টি করে মোট ২৩৪টি পদে প্রার্থী ৫০৯ জন।
প্রতিজন ভোটারের ৩৮টি করে ভোটগ্রহণের জন্য ছয় ঘণ্টা সময় রাখার পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মনে করেন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী।
ডাকসুতে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের এই ভিপি প্রার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা চাচ্ছে না, বাইরের শিক্ষার্থীরা ভোট দিতে আসুক। যত কম ভোট পড়বে, তত ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন সুবিধা পাবে।
“এটা একটি নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন, একটি ছাত্র সংগঠনকে জেতানোর জন্য তারা সামগ্রিক পরিকল্পনা করছে।”
ছাত্র ফেডারেশন থেকে জিএস প্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোটকেন্দ্র হলে রাখলে আর ভোটের সময় কম হলেই ছাত্রলীগের সুবিধা। যত কম ভোট দিয়ে তারা জয়ী হতে পারে।”
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হলের বাইরের শিক্ষার্থীরা যাতে ভোট দিতে না পারে এবং ছাত্রলীগের পক্ষে ফল যায়, সেজন্য এত কম সময় রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।”
তাদের সঙ্গে ভিন্নমত জানিয়ে ছাত্রলীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, " কোন সময়ে ভোটগ্রহণ শুরু হবে বা শেষ হবে, বুথ কত হবে, এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তকেই আমরা চূড়ান্ত বলে মনে করি।
“আমরা মনে করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এগুলো ঠিক করেছে খোঁজ-খবর নিয়ে, হিসাব-নিকাশ করে ও গবেষণা করেই।”
ভোটগ্রহণের সময় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়ে লিটন নন্দী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, তারা অনেক বুথ করবে। আমরা বলছি, যত বুথই করা হোক না কেন, এত অল্প সময়ে এত অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীর ভোটগ্রহণ শেষ করতে পারবেন না।”
ভোটের সময় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করার দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছেন জিএস পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে মোট ৩৮টি করে ভোট দিতে হবে। ভোটার সংখ্যা ৪৩ হাজার। এত কম সময়ে এই অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীর ভোটগ্রহণ করা সম্ভব না। আমরা সেজন্য সময় আরো চার ঘণ্টা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।”
তাদের দাবির বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন আর ভোটগ্রহণের সময় বাড়ানোর কোনো সুযোগ নাই।
“আমরা সবকিছু বিচার-বিবেচনা করেই ভোটগ্রহণের সময়সীমা নির্ধারণ করেছি। ভোট দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক বুথ রাখা হবে।”
ছাত্রলীগকে সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুতের অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, “এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই। ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবেই হবে। সবাই সবার ভোট দিতে পারবে।”