বৃষ্টিভেজা সকালে ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে এবং দুই সিটির ৪৯টি কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের জন্য কেন্দ্র খুলে ভোটারের অপেক্ষা করছে নির্বাচন কমিশন।
Published : 28 Feb 2019, 06:59 AM
বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের বয়কটে ‘জৌলুস হারানো’ এই ভোট নিয়ে ভোটারদের আগ্রহ যে কম, তা নির্বাচন কমিশনাররাও তা স্বীকার করেছেন। এই অবস্থায় ভোটারদের কেন্দ্রে আনাই তাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।
সব প্রস্তুতি শেষ করে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরুর জন্য কেন্দ্র খুলেছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট দেওয়ার সুযোগ রয়েছে ভোটারদের সামনে।
দুই সিটি মিলিয়ে ১ হাজার ৭০০ এর বেশি কেন্দ্রে হচ্ছে এই ভোট; সব মিলিয়ে ভোটার রয়েছেন ৪০ লাখের মত।
পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে দুদিন ধরেই বৃষ্টি চলছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। বুধবার সারা রাত ঝরার পর বৃহস্পতিবার ভোটের সকালেও হালকা বৃষ্টি চলছে।
এ অবস্থায় ভোটের শুরুতে কোনো কেন্দ্রেই ভোটারদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি।
উত্তরার নবাব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজের চারটি কেন্দ্রের মধ্যে দুটিতে সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে দুজন ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে নির্বাচনী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মহিলা কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও পোলিং অফিসাররা টেবিল সাজিয়ে বসে আছেন সকালের ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা আবহাওয়ায়। সকাল ৮টা ৩৫ পর্যন্ত কোনো ভোটারের দেখা তারা পাননি।
আনিসুল হকের মৃত্যুতে ঢাকা উত্তরে মেয়র নির্বাচনে আবার ভোট হচ্ছে। আর দুই সিটিতে যোগ হওয়া নতুন এলাকা নিয়ে গঠিত হয়েছে এই ৩৬টি ওয়ার্ড।
গত বছর এই নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও সীমানা জটিলতায় তা আটকে গিয়েছিল, আদালতের সায় পাওয়ার পর এবার ভোটের উদ্যোগ নেয় ইসি।
দুই মাস আগে সব দলের অংশগ্রহণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে উচ্ছ্বাস থাকলেও ঢাকার এই নির্বাচন নিয়ে অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ার কথা স্বীকার করেছেন খোদ সিইসি কে এম নূরুল হুদা।
সব দল না আসায় ভোট জৌলুস হারিয়েছে বলে আগেই মন্তব্য করেছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। বুধবার সিইসিও বললেন, ভোটারদের আগ্রহ কম দেখছেন তিনি।
বিএনপি বর্জন করলেও এই ভোটে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। উত্তরের মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে আনিসুল হকের মতই আরেক ব্যবসায়ী নেতা আতিকুল ইসলামকে। জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন ব্যান্ডতারকা শাফিন আহমেদ।
এই দুজন ছাড়াও এনপিপির আনিসুর রহমান দেওয়ান (আম), পিডিপির শাহীন খান (বাঘ) ও স্বতন্ত্র আব্দুর রহিম (টেবিল ঘড়ি) রয়েছেন ঢাকা উত্তরের মেয়র হওয়ার লড়াইয়ে।
আতিক সকাল সাড়ে ৮টায় উত্তরা নবাব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেবেন তার নির্বাচন শিবির থেকে জানানো হয়েছে। শাফিন ভোট দেবেন বেলা ১১ টায় গুলশানের মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল কেন্দ্রে।
সিইসি নূরুল হুদাও ঢাকা উত্তরের ভোটার। তিনি সকালে ইসি হয়ে উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরের আইইএস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন সিইসির একান্ত সচিব।
নিরুত্তাপ ভোটের কথা স্বীকার করলেও এই নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার কথা বলেছেন সিইসি নূরুল হুদা।
তিনি বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা চাই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন।”
নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে সরিয়ে দেওয়া হবে বলে সতর্ক করেন তিনি।
ইসির যুগ্ম সচিব এস এম আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং উত্তর-দক্ষিণ সিটির সম্প্রসারিত ৩৬টি সাধারণ ও ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাধারণ নির্বাচন হচ্ছে।
এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটির ৯ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মারা যাওয়ায় এ দুটিতে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় এ ওয়ার্ডে ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না।
ছুটির সঙ্গে যান চলাচলে বিধিনিষেধ
নিয়ম অনুযায়ী, নির্বাচনী এলাকায় বৃহস্পতিবার থাকছে সাধারণ ছুটি। একই নগরীতে দুই সিটি করপোরেশন হওয়ায় ঢাকা উত্তরের মানুষ ছুটি পেলেও দক্ষিণের সবাই এই ছুটির আওতায় আসছেন না।
তবে ঢাকা উত্তরসহ নির্বাচনী এলাকায় কোনো পাবলিক পরীক্ষা থাকলে পরীক্ষা কেন্দ্রের সংশ্লিষ্টরা সাধারণ ছুটির আওতার বাইরে থাকবেন বলে জানিয়েছে ইসি।
ঢাকা উত্তরে ২৭ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত থেকে ২৪ ঘণ্টা যন্ত্রচালিত যান চলাচল এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত থেকে ১ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত মোটর সাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইসি।
তবে ইসি জানিয়েছে, সিটি করপোরেশনের আওতাধীন মহাসড়ক ছাড়াও আন্তঃজেলা ও মহানগর থেকে বের হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মহাসড়ক, প্রধান প্রধান রাস্তা, সংযোগ সড়ক ও এ ধরনের সব রাস্তায় নিষেধাজ্ঞা শিথিল থাকবে।
ভোট তথ্য
>> প্রার্থী: সব মিলিয়ে প্রার্থী ৩২২ জন। উত্তর সিটিতে মেয়র পদে ৫ জন; উত্তরের ১৮ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ১১৬ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী ৪৫ জন।
দক্ষিণের ১৮ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ১২৫ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী ২৪ জন। ঢাকা উত্তরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ৭ জন।
উত্তর সিটি (কাউন্সিলর নির্বাচন)
>> সাধারণ ওয়ার্ড ১৮, সংরক্ষিত ৬
>> ভোটকেন্দ্র ২৪৩, ভোটকক্ষ ১৪৭২
>> ভোটার ৫,৯০,৭০৫; পুরুষ ২৯৮২৮৫, নারী ২৯২৪২০
দক্ষিণ সিটি (কাউন্সিলর নির্বাচন)
>> সাধারণ ওয়ার্ড ১৮, সংরক্ষিত ৬
>> ভোটকেন্দ্র ২৩৫, ভোটকক্ষ ১২৫২
>> ভোটার ৪,৯৬,৭৩৫; পুরুষ ২৫৪৪৯৭, নারী ২৪২২৩৮
টহল-পাহারা
প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ১৯ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২৩ জন সদস্য নিয়োজিত থাকবে।
নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ প্রতিরোধের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট) পরিচালনায় ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৭২ জন ও দক্ষিণ সিটিতে ২৪ জন নির্বাহী হাকিম নিয়োজিত রয়েছে।বিচারিক হাকিম রয়েছে ২৪ জন।