ডিজিটাল দুনিয়ায় উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার ঠেকাতে সংবাদমাধ্যমকে সরকারের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
Published : 21 Oct 2018, 02:38 PM
প্রয়োজনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন হতে পারে- এমন ইংগিত দিয়ে তিনি বলেছেন, “যে কোনো আইন পরীক্ষা করা যায়, সংশোধন করা যায়।”
রোববার ঢাকায় বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী ইনুর এ মন্তব্য আসে।
বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে গণতন্ত্র, গণমাধ্যম এবং সমাজের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “এ সমস্যা মোকবিলার জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে।”
তিনি বলেন, “উগ্রবাদের হুমকি ডিজিটাল সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। এর বিরুদ্ধে লড়তে সরকার ও সংবাদমাধ্যমকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”
সরকার বলে আসছে, সম্প্রতি সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ডিজিটাল মাধ্যমে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি উগ্রবাদের বিস্তার ঠেকাতেও সহায়ক হবে।
চলতি মাসের শুরুতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, সাইবার সিকিউরিটি এখন প্রতিটি দেশেই বিরাট সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসসহ নানা ধরনের অপরাধের বিস্তার ঘটছে জিডিটাল মাধ্যমে। সেসব মাথায় রেখেই সরকার ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করেছে।
তবে ওই আইনের আটটি ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন তা সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের অভিযোগ, ওই ধারাগুলো ‘স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের পরিপন্থি’।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি আশ্বস্ত করতে পারি, গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য এ আইন নয়।”
অন্যান্য পেশার মত সাংবাদিকতায় নারীর অংশগ্রহণ ক্রমশ বাড়লেও ব্যবধান যে এখনও অনেক বেশি, তা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
তিনি বলেন, ১৯৮৭ সাল থেকে ৩০ বছরে বাংলাদেশে সংবাদকর্মীদের মধ্যে নারীদের হার ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে মাত্র ১৩ শতাংশ হয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক এই হারকে আগামী তিন বছরে ৩০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করার প্রস্তাব রাখলে তাৎক্ষণিকভাবে তাতে সায় দেন তথ্যমন্ত্রী ইনু।
তবে ওই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে সবার আগে যে দক্ষতার উন্নয়ন প্রয়োজন, সে কথাও বলেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
তিনি বলেন, সংবাদ কক্ষে এবং প্রতিবেদক হিসেবে নারীদের সংখ্যা বাড়াতে হলে দক্ষতা ও যোগ্যতা বাড়ানের কোনো বিকল্প নেই।
“এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর ইন্টারনেটের কল্যাণে এখন আমরা খুব সহজেই নিজেদের শিক্ষিত বা প্রশিক্ষিত করে তুলতে পারি।”
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর পরিবেশ এখন আগের তুলনায় বেশি নারীবান্ধব- এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, নারীদের এই সুযোগ কাজে লাগাতে এগিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানের আরেক বিশেষ অতিথি মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম দেশের বাইরে থাকায় তিনিও আসতে পারেননি বলে আয়োজকরা জানান।
১৭ বছরের পুরনো বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের এবারের সম্মেলনটি হচ্ছে ১১ বছর পর। সারা দেশ থেকে প্রতিনিধিরা এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন সেতারা মূসা এ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন হুইল চেয়ারে বসে।
আশি পেরুনো এই নারী সেই ১৯৬০ এর দশকে তার সাংবাদিকতার শুরুর দিনগুলোর কথা স্মরণ করেন এবং মিলনায়তনভর্তি নারী সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, “আমি আশা করি, আগামী বছর এই সংখ্যা দ্বিগুণ হবে।”
বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হকের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক পারভীন সুলতানা ঝুমা এবং কোষাধ্যক্ষ আখতার জাহান মালিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।