প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে সচিব কমিটি যে সুপারিশ করেছিল, তাতে সায় দিয়েছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2018, 08:32 AM
Updated : 20 Jan 2020, 11:06 AM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বুধবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংস্কার/বাতিলে’ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়।

মন্ত্রিসভা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি থেকে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি আগের মতই রয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।

সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “আজ-কালের মধ্যে আমরা মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে। আশা করছি দুই-তিন দিনের মধ্যে (প্রজ্ঞাপন) হয়ে যাবে।”

শফিউল আলম বলেন, সাত সদস্যের কমিটি যে প্রতিবেদন দিয়েছিল, তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। সেখানে সব মিলিয়ে তিনটি সুপারিশ ছিল।

সুপারিশে বলা হয়, “নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ, নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড পর্যন্ত কোটা বাতিল এবং কোটা বাতিলের ফলে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থার সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠীর অর্থ-সামাজিক অবস্থার ক্ষেত্রে ভবিষতে প্রতিফলিতব্য প্রভাব নির্দিষ্ট সময় অন্তর পর্যালোচনা করে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে।”

সচিব কমিটির তিনটি সুপারিশই মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে জানিয়ে শফিউল বলেন, “যদি কখনও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জন্য কোটা রাখার প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন সরকার করতে পারবে।”

সেক্ষেত্রে আবার সচিব কমিটিকে বসে পর্যালোচনা করে সুপারিশ দিতে হবে এবং তাতে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন লাগবে বলে জানান তিনি।

কোটা পর্যালোচনায় গঠিত বর্তমান কমিটিও প্রয়োজনে পরে তাদের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করতে পারবে এবং সরকার সে অনুযায়ী কোটা ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস করতে পারবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যেদিন প্রজ্ঞাপন জারি করবে, সেদিন থেকেই প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা পদ্ধতি বাতিল হয়ে যাবে।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরির নিয়োগে ইতোমধ্যে যেসব বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে যদি বলা থাকে যে ‘কোটার বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে সে অনুযায়ী হবে’, তবে ওইসব নিয়োগেও কোটার বিষয়টি থাকবে না।

সরকারি চাকরিতে নিয়োগে এতদিন ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ।

এই কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে কয়েক মাস আগে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’। তাদের সেই আন্দোলন ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে।

আন্দোলনের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল সংসদে বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতিই আর রাখা হবে না। তবে পরে সংসদে তিনি বলেন, কোটা পদ্ধতি থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ রাখতে হাই কোর্টের রায় আছে।

এদিকে নতুন করে আন্দোলন দানা বাঁধার প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে গত ২ জুন একটি কমিটি করে সরকার।

শফিউল আলম গত ১৩ অগাস্ট সাংবাদিকদের বলেন, তারা সরকারি চাকরির কোটা ‘যতটা সম্ভব’ তুলে দিয়ে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করবেন। আর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য কোটার বিষয়ে যেহেতু আদালতের রায় আছে, সেহেতু এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়া হবে।

সে অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মতামত চাওয়া হলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার মতামত সরকারকে জানান।

সব কাজ শেষে সরকারি চাকরির নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে কোনো কোটা না রেখে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ জমা দেয় সচিব কমিটি।

প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়ার পর বুধবার তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হলে কোটা বাতিলের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যায়।