প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা না রাখার সুপারিশ

সরকারি চাকরির নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে কোনো ধরনের কোটা না রেখে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ করেছে কোটা পর্যালোচনায় গঠিত ‘উচ্চ পর্যায়ের কমিটি’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Sept 2018, 09:05 AM
Updated : 17 Sept 2018, 09:52 AM

সরকারের এ কমিটির নেতৃত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান।

তিনি বলেন, “কোটা নিয়ে রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীর কাছে আজ সাবমিট করে দিয়েছি। আমাদের ফাইন্ডিংস হল…নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত যে প্রাথমিক নিয়োগ হয়, সে নিয়োগে কোনো কোটা থাকবে না, কোনো কোটাই থাকবে না।”

কমিটির এই সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেলে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেলে আগামী মাসেই তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হতে পারে বলে জানান শফিউল আলম। 

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত; এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ত্রয়োদশ থেকে বিংশতম গ্রেডে নিয়োগের ক্ষেত্রে আগের নিয়মই বহাল থাকবে। 

সরকারি কর্ম কমিশন ইতোমধ্যে ৪০তম বিসিএসের যে বিজ্ঞাপন দিয়েছে, তার ওপর এই সুপারিশের কোনো প্রভাব পড়বে কি না- এই প্রশ্নে সচিব বলেন, “সেখানে বলা আছে সরকার যদি ভিন্নরূপ সিদ্ধান্ত নেয়- সে অনুযায়ী কোটা নির্ধারিত হবে।”

সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কিংবা প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা অন্য কোনোভাবে রাখা যায় কি না তা ভাবা হবে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শফিউল আলম বলেন, তারা যাচাই বাছাই করে দেখেছেন, এখন কোটা ‘না হলেও চলতে পারে’।

“আদালতের একটি নির্দেশনা আছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে। এ বিষয়ে আমরা এক্সামিন করেছি। আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সরকার পলিসি ম্যাটার হিসেবে যেটা সিদ্ধান্ত দেবে সেটা ঠিক আছে।”

সরকারি চাকরিতে ঢোকার বয়স ৩০ বছর থেকে বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি বলে আরেক প্রশ্নের জবাবে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটার পরিমাণ ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে কয়েক মাস আগে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’। তাদের সেই আন্দোলন ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে।

আন্দোলনের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল সংসদে বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতিই আর রাখা হবে না। তবে পরে সংসদে তিনি বলেন, কোটা পদ্ধতি থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ রাখতে হাই কোর্টের রায় আছে।

এদিকে নতুন করে আন্দোলন দানা বাঁধার প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে গত ২ জুন একটি কমিটি করে সরকার।

শফিউল আলম গত ১৩ অগাস্ট সাংবাদিকদের বলেন, তারা সরকারি চাকরির কোটা ‘যতটা সম্ভব’ তুলে দিয়ে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করবেন। আর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য কোটার বিষয়ে যেহেতু আদালতের রায় আছে, সেহেতু এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের ‘মতামত’ নেওয়া হবে।

সে অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মতামত চাওয়া হলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার মতামত সরকারকে জানান।

সব কাজ শেষে সুপারিশ জমা দেওয়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের ফাইন্ডিংস অনেক ছোট, তবে রিপোর্ট অনেক বড়, আমরা আইন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েছি। তারা বলেছে এটি সরকারের পলিসি ডিসিশন, কোনো সমস্যা নেই।”