সড়কে মৃত্যু নিয়ে সমালোচনার মুখে থাকা পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খান দুর্ঘটনা সমস্যার সমাধানের জন্য মন্ত্রিত্ব ছাড়তেও রাজি বলে জানিয়েছেন।
Published : 30 Jul 2018, 07:35 PM
তবে তিনি এটাও মনে করছেন, মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে তার পদত্যাগে এই সমস্যার কোনো সমাধান দেবে না।
পরিবহন শ্রমিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরি সভাপতি শাজাহান খান নৌমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকলেও বেপরোয়া চালনায় সড়ক দুর্ঘটনার পর সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাকে। বিভিন্ন সময় পরিবহন শ্রমিকদের পক্ষ নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য তার এই সমালোচনা।
রোববার দুপুরে ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পরও সমালোচনাবিদ্ধ তিনি।
সোমবার সচিবালয়ে নিজের দপ্তরে শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেন, “দুর্ঘটনা ঘটলেই অনেকে আমার পদত্যাগ দাবি করেন। আমি তাদের অনুরোধ করব এবং বলব, আপনারা যদি বলতে পারেন হ্যাঁ, আপনি গেলেই সব সমস্যা সমাধান হবে, আমার যেতে তো কোনো অসুবিধা নেই।”
রোববারের ওই দুর্ঘটনার পর ওই কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক আটকে বিক্ষোভ দেখিয়েছে সোমবারও। ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগের দাবিও উঠেছে।
দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাকে ‘মর্মান্তিক ও দুঃখজনক’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দুঃখজনক বললেই শেষ হবে না। …যারা প্রকৃতপক্ষে দোষী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, এগুলোকে তো কেউ সমর্থন করবে না।
“যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলে আমাদের মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবাদ আমরা করতে রাজি নই, এসবের দায়-দায়িত্ব আমরা নেব না।”
নিহত দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন দিয়া খানম মিমের বাবা একজন গাড়িচালক। তিনি দূরপাল্লার বাস চালান। যোগ্যতা ছাড়াই চালকদের লাইসেন্স দেওয়া এই ধরনের দুর্ঘটনার পথ তৈরি করে দিয়েছে বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন তিনি।
সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের মৃত্যুর পর সড়ক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত আইনে চালকদের শাস্তি কঠোর করার উদ্যোগ নেওয়া হলে তখন ব্যাপক বিরোধিতা করেছিলেন শাহজাহান খান।
তিনি তখন বলেছিলেন, শিক্ষাগত যোগ্যতা নয়, রাস্তায় সঙ্কেত চিনতে পারলেই গাড়িচালনার অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে। তখন তার কথার ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল।
শাজাহান খান রোববারের দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়ে বলেন, “আমি ছাত্রবন্ধুদের আশ্বস্ত করতে চাই, এর কঠোর বিচারের ব্যবস্থা হবে। আপনারা অপেক্ষা করুন, আমরা কী করছি দেখেন।”
বাংলাদেশের চেয়ে ভারত ও পাকিস্তানে দুর্ঘটনার হার বেশি দাবি করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে দুর্ঘটনা হার আগের তুলনায় কমে এসেছে।
জাবালে নূরের মালিককে ‘চেনেন না’ মন্ত্রী
শিক্ষার্থীদের চাপা দেওয়া জাবালে নূর পরিবহনের মালিকদের মধ্যে আদৌ নিজের আত্মীয় আছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত নন বলে জানিয়েছেনমন্ত্রী শাজাহান খান।
ওই পরিবহনের মালিক নৌমন্ত্রীর শ্যালক বলে কয়েকটি গণমাধ্যম খবর প্রকাশিত হয়েছে জানিয়ে একজন সাংবাদিক এ বিষয়ে মন্ত্রীর বক্তব্য চান।
জবাবে তিনি বলেন, “জানি না তো কোন গাড়ি কার, এগুলো আমার জানা নেই। গাড়ির কোম্পানিগুলো সব চিনিও না। কার গাড়ি কোনটা আমি জানি না, আমি আদৌ চিনি না, খবর নেব।”
ওই গাড়ির মালিক তাহলে আপনারা শ্যালক নয়- এ প্রশ্নের উত্তরে এই শ্রমিক নেতার কথায় জানা গেল, পরিবহন মালিকদের মধ্যেও রয়েছেন তার স্বজনরা।
“আমি জানি না ঠিক, জোর দিয়ে বলছি না। এটা তো একটা কোম্পানি, এতে ১০ থেকে ২০ জন মালিক থাকতে পারে। ব্যবসা আমার ভাইয়েরা করে। গাড়ি ব্যবসা আমাদের আদি ব্যবসা, ১৯৬২ সাল থেকে আমাদের গাড়ির ব্যবসা।”
শ্রমিক নেতা শাজাহান খান বলেন, “পরিবহন সেক্টরে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, সেগুলো নিয়ে আমরা মালিক-শ্রমিকরা আগামীকাল (মঙ্গলবার) বসব। আমাদেরও কিছু দায়িত্ব নিতে হবে। যে দায়িত্বগুলো নেওয়ার জন্য আমরা মালিক-শ্রমিকরা একমত হয়েছি। আগামীকাল সন্ধ্যায় মিটিং করে চালকদের একটা মেসেজ আমরা দিতে চাই।
তবে সেই সভার স্থান এখনও ঠিক হয়নি বলে জানান মন্ত্রী।