যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে মন্তব্যের জন্য আদালত অবমাননার দায়ে দণ্ডিত জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদকে কারাগারে পাঠিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
Published : 25 Jul 2018, 02:11 PM
পাঁচ বছর আগের এই দণ্ডাদেশে বুধবার সকালে কক্সবাজারের সাবেক এই সাংসদ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় বলে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম জানিয়েছেন।
আদালতে জামায়াতের এই নেতার পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুস সুবহান তরফদার ও মতিউর রহমান আকন্দ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন জিয়াদ আল মালুম।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং বিচারাধীন বিষয়ে অবমাননাকর বক্তব্য ও দেশে ‘গৃহযুদ্ধ’র হুমকি দেওয়ায় আদালত অবমাননার অভিযোগে ২০১৩ সলের ৯ জুন হামিদুর রহমান, তৎকালীন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও মহানগর সহকারী সেক্রেটারি সেলিম উদ্দিনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
হামিদুর ও রফিকুলকে তিন মাসের কারাদণ্ড এবং তিন হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই সপ্তাহের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল।
আর সেলিম ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করায় তাকে একহাজার টাকা জরিমানা এবং আদালত কার্যক্রম চলাকালে আদালতে বসে থাকার শাস্তি দিয়েছিল।
ট্রাইব্যুনাল আদেশে বলেছিল, পুলিশের প্রতিবেদনে রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আযাদকে পলাতক দেখানো হয়েছে। কিন্তু তারা জনসমক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ সংসদেও গেছেন। তারা ট্রাইব্যুনালে হাজির না হয়ে আদালত অবমাননা করেছেন। তাদের গ্রেপ্তার করার পর অথবা আত্মসমর্পণের পর থেকে এ সাজা কার্যকর হবে।
ওই বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মতিঝিলে জামায়াতের এক সমাবেশে এই তিন নেতা বিচারাধীন বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন।
মতিঝিলে জামায়াতের ওই সমাবেশে সেলিম উদ্দিন ট্রাইব্যুনালকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবেন না। সবকিছু হিসেব করে রায় দেন।
তিনি বলেন, একটা রায়ই শেষ নয়। রায়ের পর রায়, এরপর বহু প্রতিক্রিয়া আছে। বিষয়টি হালকাভাবে দেখলে চলবে না। দেশকে গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচাতে হলে বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল থেকে রায় দেওয়ার কোন সুযোগ নেই।
একই সমাবেশে হামিদুর রহমান আযাদ বলেছিলেন, স্কাইপে সংলাপের গোপন তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর এ ট্রাইব্যুনাল আর এক মুহূর্তও চলতে পারে না।
আর রফিকুল ইসলাম খান পরের দিন অর্থাৎ ৫ ফেব্রুয়ারি প্রেস ব্রিফিংয়ে একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছিলেন।
বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে ৭ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করে তাদের সশরীরে হাজির হয়ে বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে বলে ট্রাইব্যুনাল।
কিন্তু এই তিন নেতার কেউই ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে জবাব না দেওয়ায় ট্রাইব্যুনাল ৬ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পরে সেলিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।