ফিরে আসা নারী কর্মীরা এখন সৌদি আরবে ফিরতে চাইছেন বলেও দাবি করেছেন মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি।
২০১৫ সালে চুক্তির পর গত চার বছরে দুই লাখ নারী গৃহকর্মী সৌদি আরবে পাঠানো হলেও তাদের অনেকে ফেরত আসছেন। ফেরত আসা নারীরা মধ্যপ্রাচ্যের রক্ষণশীল মুসলিম দেশটিতে গৃহকর্তা কর্তৃক নির্যাতিত হওয়ার কথা বলছেন।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মাহজাবীন মোরশেদ সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মীদের নির্যাতনের বিষয়ে ৭১ বিধিতে একটি নোটিস আনেন।
সোমবার তার জবাব দিতে গিয়ে মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি সৌদি আরবে গৃহকর্মী নির্যাতন বন্ধে সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
মন্ত্রী বলেন, “সরকারের পদক্ষেপের ফলে অনেক অত্যাচার-নির্যাতন কমেছে। নারীকর্মীরা অনেক ভালো আছে। যারা ফেরত এসেছেন, তারা আবারও যেতে চান।”
কত নারী সৌদি আরব থেকে ফিরেছেন, তা সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও প্রতি মাসে গড়ে দুইশ জনের মতো ফিরছেন বলে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিভাসন বিষয়ক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সৌদি আরবে গৃহকর্মী পাঠানোর পরপরই নির্যাতনের খবর এলেও তখন তা নাকচ করেছিল প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটি। কমিটির একটি দল সৌদি আরব ঘুরে এসে বলেছিল, গৃহকর্মীরা সেখানে ‘বেশ ভালো আছেন’। ভাষা না জানা, খাবার ভালো না লাগা এবং ঘরের প্রতি অতি টানের কারণে তারা দেশে ফিরতে চান।
তবে সৌদি আরব থেকে ফিরে আসা নারীদের কথায় ভিন্ন চিত্রই উঠে আসে। তারা যৌন নির্যাতনের অভিযোগও তুলেছেন। এদের কেউ কেউ মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেছেন।
নোটিসে মাহজাবীন মোরশেদ বলেন, “নির্যাতনের মাত্রা এত বেশি হচ্ছে যে তারা এক সময় ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। এ ধরনের নির্যাতিত নারী সৌদি আরব থেকে প্রতি মাসে দুই শতাধিক দেশে আসছে। টাকা পয়সা খরচ করে বিদেশে গিয়ে নির্যাতিত হয়ে খালি হাতে ফিরছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।”
নোটিসের জবাবে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীও সংসদীয় কমিটির মতোই বলেন, “সৌদি আরবে নারীকর্মীদের মূল সমস্যা আরবি ভাষা বোঝা ও বলার সক্ষমতা না থাকা। নারীকর্মীদের কেউ কেউ সৌদি আরবের পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস, ভাষা ইত্যাদি বিষয়ে খাপ খাওয়াতে না পেরে বিভিন্ন সময় পালিয়ে সেইফ হোমে আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে। এছাড়া রমজান মাসে অত্যাধিক চাপে পালিয়ে আসে।”
তবে অবস্থার উত্তরণে সৌদি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে বলে জানান মন্ত্রী; যদিও এই ধরনের নির্যাতনের কোনো ঘটনার বিচারের নজির নেই।
নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, “বিদেশ থেকে যারা ফিরে আসে, কী কারণে আসে এবং তারা কোথায় নির্যাতিত হয়েছে, তার খবরাখবর আমরা রাখছি। যাদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে, তাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে না পারলেও আমাদের মিশনের মাধ্যমে যোগাযোগ করি। দরকার দলে সে দেশের মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ হয়।”
মাহজাবীন তার নোটিসে টাকার অভাবে যারা বিদেশ যেতে পারে না তাদের জন্য ভিসার উপর ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলেন। দালালদের হয়রানি বন্ধ করতে বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, “দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য রোধে জনসচেতনতামূলক নানাবিধ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিরাপদ অভিবাসন সম্পর্কে বুকলেট, লিফলেট, পোস্টার ইত্যাদি বিতরণ, টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপনসহ মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।”