সৌদি আরবে বাংলাদেশি নারী শ্রমিকদের নির্যাতনের অভিযোগ মানতে নারাজ বাংলাদেশ-সৌদি আরব সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপ।
Published : 05 Nov 2016, 02:46 PM
গণমাধ্যমে আসা এ সংক্রান্ত তথ্য নিয়েও সন্দেহও প্রকাশ করেছে সংসদীয় এই ফোরামটি।
মৈত্রী গ্রুপ বলছে, এক সময় বাংলাদেশি নারী শ্রমিক নির্যাতনের খবর এলেও সৌদি সরকার ও বাংলাদেশের পদক্ষেপের কারণে ৯৯ শতাংশ নারী শ্রমিক বর্তমানে ‘স্বচ্ছতার’ মধ্যে কাজ করছে।
শনিবার সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সৌদি আরব সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ফোরামের চেয়ারম্যান ও ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সৌদি আরবের মজলিসে শূরার আমন্ত্রণে নয় দিনের সফরে যাবে সংসদীয় গ্রুপের প্রতিনিধি দল। ওই প্রতিনিধি দলে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদও সফর করবেন।
প্রতিনিধি দলে আরও থাকবেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন, সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম সুজন, একেএম আউয়াল (সাইদুর রহমান), নজরুল ইসলাম বাবু, তালুকদার মো. ইউনুস।
সংবাদ সম্মেলনে বজলুল হক হারুন বলেন, সফরে সৌদি আরবের শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ দেশটির উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে তাদের বৈঠক হবে। শ্রম বাজার, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হবে।
চলতি বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি সফরের ‘ফলোআপ’ হিসেবে এই সফর হচ্ছে বলে জানান হারুন। বৃহস্পতিবার প্রতিনিধি দল সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা হবে। ফিরবে ১৩ নভেম্বর।
সৌদিতে নারী কর্মী নির্যাতনের বিষয়ে দেশীয় গণমাধ্যমের খবরের প্রসঙ্গ তুলে এ বিষয়ে সৌদি সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে কি না-এ প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, “এ বিষয়ে শৃঙ্খলা এসেছে।
“সৌদিতে বাংলাদেশি দূতাবাসের শ্রম উইং কাজ করতে দেওয়া নারীদের সিম দেয়, যাতে তারা যোগাযোগ করতে পারে। এখন অভিযোগ শুনি না বললেই চলে।”
গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি ৮০০ রিয়াল (প্রায় ১৬ হাজার টাকা) বেতনে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২০ হাজার গৃহকর্মী নেওয়ার ব্যাপারে সৌদি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি চুক্তি সই হয়।
এর পর সৌদি গেজেটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, অধিকাংশ বাংলাদেশী নারী শ্রমিক সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী নন। এর কারণ হিসেবে সৌদি গেজেট উল্লেখ করে, বাংলাদেশী নারী গৃহকর্মীরা সৌদি আরবের আচার, সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন না।
গণমাধ্যেমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, প্রতি মাসে ১০ হাজার নারী কর্মী সৌদি আরবে পাঠানোর কথা তা পারছে না। এর আগে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক নারী কর্মীদের নাম নিবন্ধনের জন্য গত ৫ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে নিবন্ধন কার্যক্রম ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। নির্ধারিত সময়ে নাম নিবন্ধন করেন মাত্র ২ হাজার ৫৭০ জন নারী।
নির্যাতনের ভয়ে বাংলাদেশি নারীরা সৌদি আরব যেতে চাচ্ছেন না বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।
গত জুলাই মাসে সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী কল্যান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি জানান, বিশ্বের মোট ৬৮টি দেশে বাংলাদেশ থেকে নারী কর্মী পাঠানো হয়েছে। গত এক যুগে বছরে এসব দেশে পাঁচ লাখ ৬ হাজার ৫০৬ জন নারী কর্মী গিয়েছে।
মন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সব থেকে বেশি নারী কর্মী গেছে আরব আমিরাতে। গত জুন ২০০৪ থেকে জুন ২০১৬ পর্যন্ত দেশটিতে মোট এক লাখ ১৬ হাজার ৫৫০ জন নারী কর্মি গিয়েছেন। এছাড়া লেবাননে এক লাখ ১ হাজার ৩১২ জন, জর্ডানে ৯৭ হাজার ৩৩১ জন, সৌদি আরবে ৯১ হাজার ৬২৮ জন, ওমানে ৫০ হাজার ২২৩ জন নারী শ্রমিক এসব দেশে গিয়েছেন।
ওই দিন সংসদে সৌদি নারী নির্যাতনের অভিযোগ নাকচ করে তিনি আরও বলেন, “অনেক সময় দেশে ফিরে আসার জন্য নারী শ্রমিকেরা নানা মিথ্যা কথা বলেন। তারা সেখানে গিয়ে ভাত খেতে চান। কিন্তু সৌদি আরবের মানুষ ভাত খায় না, রুটি খায়। তখন বাংলাদেশি শ্রমিকেরা ভাত দেওয়া হয় এমন অভিযোগ তোলেন।”
মন্ত্রী আরও বলেন, “অনেক নারী শ্রমিকের মধ্যে হোম সিকনেস কাজ করে। তখন তারা ফিরে আসার জন্য নানা কাহিনী সৃষ্টি করে।”
শনিবার সংসদের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি একটি টেলিভিশনের প্রতিবেদক আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশি নারী শ্রমিক নিয়োগের নামে ‘বিক্রি’ এবং দূতাবাসের শ্রম উইংয়ের কাছে কর্মরত নারীদের তথ্য না থাকার বিষয়টি তুলে ধরলে তিনি বলেন, “বিক্রি হওয়ার কোন সুযোগ নেই। এ বিষয়ে যাতে আরও শৃঙ্খলা আসে সেটা নিয়ে দিকে আমরা আলোচনা করবো। আর দূতাবাসের কাছে তথ্য নেই এটা মনে হয় সঠিক না। তাদের কাছে তথ্য আছে ও আসছে।”
এ পর্যায়ে বায়রা সভাপতি বেনজীর আহমেদ বলেন, “সৌদিতে নারী কর্মীদের নির্যাতনের বিষয়ে নতুন আইন হওয়ার পরে নির্যাতন হয় না বললেই চলে। বর্তমানে ৬৫ হাজার নারী শ্রমিক সৌদিকে স্বাচ্ছন্দ্যে আছে।”
“একটা বিষয় হচ্ছে, শ্রম বাজারে আমাদের প্রতিযোগী দেশ আছে। খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে এই প্রতিযোগিতার বিষয়গুলি খেয়াল রাখতে হবে,” সাংবাদিকদের পরামর্শ দেন তিনি।
নজরুল ইসলাম বাবু এ পর্যায়ে শ্রমিক ‘বিক্রি’ শব্দটি ব্যবহার নিয়ে আপত্তি তোলেন।
আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে নারী শ্রমিক নিয়োগের নামে বিক্রি করা হয়, দাম্মামের ইসাদ নামের এমন একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সংক্রান্ত বাংলাদেশি গণমাধ্যমের খবরের বিষয় তুলে ধরা হলে বজলুল হক হারুন বলেন, “এ বিষয়ে আরও শৃঙ্খলা যাতে আসে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকে সেটি নিয়ে সফরে গিয়ে আলোচনা করবে।”