এক পর্যায়ে এসব নির্যাতিতরা পালিয়ে কিংবা অন্য কারও সহায়তায় আশ্রয় নিচ্ছেন বাংলাদেশ দূতাবাসের ‘সেইফ হোমে’।
সর্বশেষ ১০ মার্চ সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার ৩৯ নারীকে দূতাবাসের উদ্যোগে দেশে পাঠানো হয়।
স্থানীয় সময় রোববার দূতাবাসের ‘সেইফ হোমে’ আশ্রিত কয়েকজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন তাদের ক্ষোভের কথা।
এদেরই একজন শেরপুরের শেফালি বেগম। তিনি বলেন, “ভাইরে মাইনসে য্যান আর সৌদি আরব না আসে। সৌদি ব্যাটারা (পুরুষরা) খুব খারাপ। ব্যাটারা মাইয়া পাইলে অনেক খারাপ আচরণ করে।”
তিনি জানান, বিয়ে হলেও স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় তার। এরপর নিজের একটি মাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে বাবা-মায়ের কাছে থাকতেন। তাদের বোঝা হয়ে না থেকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে বিদেশ পাড়ি জমান।
সরকারি খরচে কম টাকায় সৌদি আরবে গৃহকর্মীর কাজ মেলে। বাবার জমি বিক্রি করে ৪০ হাজার টাকা জোগাড় করেছিলেন শেফালি। এরপর পাসপোর্ট আর ভিসা করে আসেন সৌদি আরবে।
নির্যাতনের ব্যাপারে বলার সময় শেফালি অভিযোগ করে বলেন, সৌদি ব্যাটারা তো মাইনসের বাচ্চা না। নরপশু। ওই ব্যাটাগো আবার মা বইন আছে নাকি? আমার সঙ্গে যা হইছে তা তো আর মুখে কওন যায় না (বুইঝা লন)। শুধু শুধু তো আর কাজের বাসা থাইক্যা পলায় আসি নাই।
“ওই বাসাতে ৬ জন ব্যাটা (পুরুষ) মানুষ আছিল। বাপ ব্যাটা সবাই খুব খারাপ। বাধ্য হইয়া একদিন বিকেলবেলা পলায় আইছি।”
শেফালির মতই আর্থিক স্বচ্ছলতার খোঁজে সৌদিতে গিয়ে একই ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন নারায়নগঞ্জের ফতুল্লার হাসিনা বেগমও।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বিয়ে হলেও স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়েছে তার। তালাকপ্রাপ্ত। সৌদি আরবে এক বাসায় কাজ করছিলেন দুই বছর। কিন্তু কাজের পরিবেশ তেমন ভালো না। দেশে যেতে চাইলে সৌদি মালিক তাকে দূতাবাসের দরজায় ছেড়ে চলে যায়।
তাদের কথা না শুনলে চুরির অপবাদ দিয়ে জেলে পাঠানোর মামলা দিয়েও হয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ করেন ৩৯ বছর বয়সী ফাতেমা।
এদিকে রোববার গৃহকর্মী ভিসায় সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার আরেক গৃহকর্মী রেহেনা পারভীন দেশে ফিরেছেন। বাগেরহাটের রামপালের রেহানা জানান, কলেজপড়ুয়া মেয়ের পড়ালেখার খরচ যোগাতে এক বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমান মেডিকেলে কাজ পাওয়ার আশ্বাসে। কিন্তু কাজ মেলে গৃহকর্মী হিসেবে।
তিনি বলেন, “গৃহকর্মী হিসেবে কাজে যোগ দেওয়ার পর থেকেই শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। শত চেষ্টা করেও কিছুতেই কিছু সমাধানে আসা সম্ভব হয়নি। এদিক-ওদিক যোগাযোগ করেও ব্যর্থ হইছি।”
রেহানা জানান, পরে ওই বাসার মালিক তাকে অন্য বাসায় বিক্রি করে দেন। সেখানেও শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। এত নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পারভীন আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু দেশে নিজের মেয়ের কথা চিন্তা করে আত্মহত্যা করতে পারেননি।
অবশেষে সৌদি প্রবাসী সংবাদ কর্মী আব্দুল হালিম নিহন, ফাতেমা ও আরাফাতের সহযোগিতায় একটি এজেন্সির মাধ্যমে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর নারী গৃহকর্মী সৌদিতে পাঠানোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল সৌদি সরকার।
অন্যদিকে বিদেশে নারী গৃহকর্মী দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে বেশকিছু বিধিমালা থাকলেও কিছু অসাধু ট্রাভেল এজেন্সি সরকারের দেওয়া অনেক নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তাদের ভাড়াটে দালালের মাধ্যমে নানা রকম মিথ্যে প্রলোভন দেখিয়ে সৌদি আরবে হাজার হাজার গৃহকর্মী পাঠিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
দূতাবাসে আসা ও আশ্রিত গৃহকর্মীদের বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর সরওয়ার আলম বলেন, “গৃহকর্মীদের বক্তব্য নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মামলা নিষ্পত্তি হলে ধীরে ধীরে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।”
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |