খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকার ‘আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে প্রভাব খাটিয়ে মারামারি ছাড়া’ জয়ী হয়েছে এবং সেই পদ্ধতি গাজীপুরে ব্যবহার করে সফল হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান।
Published : 05 Jul 2018, 05:24 PM
তিনি বলেছেন, আসন্ন তিন সিটির ভোট ও জাতীয় নির্বাচনেও ‘একই পদ্ধতি’ ব্যবহার করা হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের আয়োজনে ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেমন জনপ্রতিনিধি পেলাম’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে হাফিজ উদ্দিন খান এ কথা বলেন।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করা হাফিজ বলেন, “খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন জেনুইন নির্বাচন হয়নি। নির্বাচনে প্রভাব সৃষ্টি করতে আগে মারামারি-কাটাকাটি হত, এ নির্বাচনে প্রভাব সৃষ্টি করতে গিয়ে তা হয়নি। তবে সেখানে আগে থেকে প্রশাসনকে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল, বিএনপিকে এমনভাবে রাখা হয়েছিল, যে কারণে এমন কোনো পরিস্থিতি করার মত অবস্থা ছিল না।”
তিনি বলেন, “সেখানে (খুলনা) সরকার সাকসেসফুল, সেখানে তারা এক্সপেরিমেন্ট করেছে, এখানে (গাজীপুর) এসে ব্যবহার করা হয়েছে।”
আগামী নির্বাচনগুলোতেও একই পদ্ধতি ব্যবহারের ‘আশঙ্কা ’ প্রকাশ করে সুজন সভাপতি বলেন, “এখন ভয় হচ্ছে, বাকি তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও এমন করবে; জাতীয় নির্বাচনেও হতে পারে।”
গত ১৫ মে খুলনা সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে প্রায় ৬৬ হাজার ভোটে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক। অনিয়মের কারণে সেখানে তিন কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হয়।
আর গত ২৬ জুন গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম দুই লাখের বেশি ভোটে পরাজিত করেন বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারকে। ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও জালভোটসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে সেখানে স্থগিত হয়েছে ৯টি কেন্দ্রের ভোট।
বিএনপি দুই নির্বাচনেই ব্যাপক ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছে।
তবে এম হাফিজ উদ্দিন মনে করেন, নির্বাচন কমিশন ‘সাহসের সাথে’ দায়িত্ব পালন করলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।
তিনি বলেন, “তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা। এর জন্য যা যা করার তা তাদের করতে হবে। তাদের আইন-বিধি করার ক্ষমতা দেওয়া আছে। সেগুলো তারা ব্যবহার করতে পারে।”
নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা বলেছিলাম, জাতীয় নির্বাচনের সময় সংসদ বাতিল করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের জবাব, সেটা নাকি তাদের আওতাভুক্ত না।… তারা তো দায়িত্ব পালন করল না, তারা ব্যর্থ হচ্ছে।”
নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে সংসদ বাতিলের দাবি জানিয়ে এম হাফিজ উদ্দিন খান ইসির উদ্দেশে বলেন, “সরকার কী করবে সেটা তো পরের কথা, আগে তো পার্লামেন্ট বাতিলের কথা আপনাদের বলতে হবে।”
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “যে রকম নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন দায়বদ্ধ এবং আমরা যে রকম নির্বাচনের আশা করি, সেই রকম নির্বাচন গাজীপুরে হয়নি, খুলনাতেও হয়নি।”
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা চেয়ে তিনি বলেন, “এর জন্য আমরা কতগুলো স্পষ্ট সুপারিশ করেছিলাম। এখন বলটা নির্বাচন কমিশনের হাতে, নির্বাচন কমিশন যদি বলটা সঠিকভাবে করে, তাহলে আগামী দিনে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পাব।”
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সুজনের লিখিত পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।
তিনি বলেন, “গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়, নির্বাচনের আগেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা এলাকা ছাড়া হয়। মাঠ ফাঁকা হওয়ায় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে প্রকটভাবে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেয়।”
এ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকদের ‘গ্রেপ্তার ও হয়রানি’ করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন দিলীপ।
তিনি বলেন, “নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার না করার বিষয়ে হাই কোর্টের আদেশ এবং ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার না করতে ইসি নির্দেশনা জারি করলেও অনেককে গ্রেপ্তারের অভিযোগ উঠে, এমনকি নির্বাচনের দিনেও।”
নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “গাজীপুরে বিএনপি প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়েছে। তাদের অনেককে কেন্দ্রে উপস্থিত হতে বাধা দেওয়া হয়েছে, কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। কাউকে কাউকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক রেখে ভোটের পর মুক্তি দিয়েছে। কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের অনুপস্থিতে কোনো প্রার্থীর পক্ষে ভোটের সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।”
গণমাধ্যম ও ‘সুজনের স্বেচ্ছাব্রতীদের’ পর্যবেক্ষণের কথা উল্লেখ করে সুজন সমন্বয়ক বলেন, “খুলনার নির্বাচনের মত গাজীপুরেও ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে জোর-জবরদস্তি করা হয়েছে। সাময়িকভাবে কেন্দ্র দখল করে জালভোট প্রদান, ভোটকেন্দ্র এবং আশপাশে ভীতিকর ও বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতির সৃষ্টি, ভোট প্রদানে বাধাসহ নানা অনিয়ম ঘটেছে। এর ফলে অনেকগুলো কেন্দ্রে অস্বাভাবিক ভোট পড়েছে।”
সুজনের নির্বাহী সদস্য হামিদা হোসেনও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।