মাদকবিরোধী অভিযানে নিহতের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট উদ্বেগ জানানোর পর সবগুলো ঘটনার তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
Published : 30 May 2018, 07:59 PM
মাদক নির্মূলে চলমান অভিযানে নিহতের সংখ্যা একশ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর বুধবার সচিবালয়ে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানান যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত।
এই মৃত্যুর ঘটনাগুলোকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বললেও তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বার্নিকাট সাংবাদিকদের বলেন, বিচার বহির্ভূত হত্যা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কার্যকর পন্থা নয়। অভিযানে মৃতের সংখ্যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। সবার বিচার পাওয়ার অধিকার আছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কক্সবাজারের ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামুল হকের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, “শুধু একরাম কেন? (মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে) যে কয়টি হত্যাকাণ্ড হয়েছে, সবগুলোর বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তদন্ত হবে।
“যেখানে বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে, সেখানে একজন ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত করে দেখবেন, গান ফায়ারটি সঠিক ছিল কি না। যদি অন্যায়ভাবে কেউ গুলিবিদ্ধ হয়ে থাকে তাহলে ম্যাজিস্ট্রেটের তদন্ত অনুযায়ী সেই ব্যবস্থাও হবে।”
তদন্তে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিচারের আশ্বাসও দেন তিনি।
কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর একরাম গত শনিবার রাতে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। তার মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের উদ্বেগ প্রশমনে অভিযানের লক্ষ্য তার কাছে তুলে ধরেছেন বলে জানান আসাদুজ্জামান কামাল।
“তিনি তার উদ্বেগের কথা বলেছেন যে, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মানুষ মারা যাচ্ছে, নিহত হচ্ছেন। আমরা জানিয়েছি, এদেশ থেকে জঙ্গি ও সন্ত্রাস আমরা যেভাবে কন্ট্রোল করেছি, এদেশের জনগণকে নিয়ে... আজকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী মনে করছেন, মাদক যেভাবে বিস্তার লাভ করছে, সেটা যদি আমরা বন্ধ করতে না পারি তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ হারিয়ে যাবে।
“তিনি (বার্নিকাট) সবই স্বীকার করেছেন। আমরা যে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টরারেন্স নীতিতে মাদক নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, সেটা সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ঠিকই আছে। তিনিও প্রশংসা করেছেন।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যারা নিহত হচ্ছেন, তাদের বিষয়ে আরেকটু সতর্ক হওয়া যায় কি না বার্নিকাট বলেছেন।
“এই অবৈধ ব্যবসা, অবৈধ অস্ত্র- সেখানে কেউ খালি হাতে গেলে ভালোভাবে ফিরে আসবে না, এটাই স্বাভাবিক। এজন্য আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তৈরি হয়ে যায়। সেজন্যই বন্দুকযুদ্ধ হয়। হত্যা করার কোনো উদ্দেশ্য আমাদের নেই।”
মাদকবিরোধী অভিযানে আইনের কোনো ব্যত্যয় হচ্ছে না দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “কোনো নির্দোষ লোককে আমরা কারান্তরীণ করছি না।
“তিনি (বার্নিকাট) মোটামুটি আমাদের সঙ্গে কথা বলে যেটা জানতে চেয়েছিলেন, সেটা জেনে গেছেন।”
নিহতদের অনেককে আগে ধরে নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি স্পষ্ট করে বলছি, আমরা একজনকেও পিক করিনি। যারা বলেছে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেগুলোর একটার প্রমাণও পাওয়া যায়নি।”
কারা কারা মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত, কারা কারা মাদক ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত, কারা সহযোগিতা করছে- গোয়েন্দা সংস্থা সেই তালিকা তৈরির পরই অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
“আমরা একটি নয়, পাঁচটি সংস্থার মাধ্যমে এই তালিকাটি তৈরি করেছি, তালিকায় যে সব নামগুলো কমন, সেই নামগুলো নিয়ে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে।”
ইয়াবা পাচার বন্ধে মিয়ানমার সহযোগিতা করছে না বলেও বার্নিকাটকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।