নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন, হাইজিন এবং পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অঞ্চলভিত্তিক বাজেট বরাদ্দে বৈষম্য প্রকট হয়ে উঠছে অভিযোগ করে আসন্ন বাজেটে তা দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা।
Published : 14 May 2018, 12:22 PM
রোববার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ওয়াটার এইড ও ইউনিসেফের এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তাদের এ আহ্বান আসে।
পিপিআরসি, ফানসা-বিডি, ডব্লিউএসএসসিসি-বি, এফএসএম নেটওয়ার্ক, স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অল এবং ওয়াশ অ্যালায়েন্সের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে।
পিপিআরসির চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন, হাইজিন (ওয়াশ) এবং পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, ওয়াশ বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে ছোট শহর, চর, উপকূলীয়, ও পাহাড়ি অঞ্চলের তুলনায় মহানগরগুলো অনেক বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে। আবার বাজেট ও ব্যয়ের ধরণ থেকে বোঝা যায় যে বরাদ্দ অর্থও সঠিক পরিমাণে ব্যয় হয় না।
এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা-৬ এ সার্বজনীন এবং সমতার ভিত্তিতে নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশনসহ স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নের কথা মনে করিয়ে দিয়ে হোসেন জিল্লুর বলেন, “এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের সঠিকভাবে পয়োঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ ওয়াশ কর্মসূচির প্রতিটি আন্তঃখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
“দেশব্যাপী শহর ও গ্রামে সকল অবহেলিত অঞ্চলে ওয়াশ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সমতা ও ন্যায্যতা রক্ষা করতে হবে। সমতার নীতি অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।”
পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) ওই গবেষণার তথ্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ২০১৭-১৮ সালের বাজেটে দেশের মহানগরগুলোর জন্য যেখানে ৪ হাজার ৪২০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, যেখানে পাহাড়ি, উপকূলীয় এবং চর এলাকাসহ গোটা গ্রাম বাংলার জন্য বরাদ্দ মাত্র ৯৩৯ কোটি টাকা। আর ছোট শহরগুলোর সম্মিলিত বরাদ্দ ছিল মাত্র ৮৩৫ কোটি টাকা।
২০১১ সালে নিরাপদ পানি, পরিচ্ছন্নতা ও হাইজিন খাতে ২৫ বিলিয়ন টাকার বিপরীতে ২০১৭-১৮ সালের ৬৫ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দের তথ্য তুলে ধরে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, এ খাতের এসডিজি লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে প্রয়োজন ৯৩ বিলিয়ন টাকা। সেখানে বাজেটে এখনো ২৮ বিলিয়ন টাকার ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।
“২০১৭-১৮ অর্থ বছরে এই খাতে অর্থ বরাদ্দ ৬ হাজার ৫০৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে যা ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে ছিল ২ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা। তবে গত ছয় অর্থবছরে ক্রমবর্ধমান জিডিপি ও বাজেটের আকার বৃদ্ধির তুলনায় এই অর্থ বেড়েছে মাত্র ৩.৩ শতাংশ, যা তুলনামূলকভাবে কম।”
দেশের আটটি সিটি করপোরেশনের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীতে পরিচ্ছন্নতা খাতে ৪ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও গত দুই অর্থবছরে খুলনা, বরিশাল ও গাজীপুর সিটিতে কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন হোসেন জিল্লুর রহমান।
তিনি বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পয়োঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে বরাদ্দ দেওয়া ২৭২ কোটি টাকা নিতান্তই ‘অপ্রতুল’।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ইউনিসেফের চিফ অফ ওয়াশ ডারা জনসন বলেন, পরিচ্ছন্নতা খাতে বাজেটের যথাযথ ব্যবহারের পাশাপাশি এ খাতে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তারা সরকারের সঙ্গে কাজ করছেন।
ওয়াটার এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর খায়রুল ইসলাম, ডব্লিউএসএসসিসি-বির ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর এস এম আনোয়ার কামালসহ অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।