কপিরাইট আইন কার্যকরের পথে অংশীজনের সচেতনতার অভাবকে একটি বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এক সেমিনারের আলোচকরা।
Published : 23 Apr 2018, 09:46 PM
আন্তর্জাতিক কপিরাইট দিবস উপলক্ষে সোমবার ঢাকার জাতীয় জাদুঘরে ‘মেধাসম্পদ বিকাশে কপিরাইটের ভূমিকা’ শীর্ষক এই সেমিনারে বাংলাদেশের কপিরাইট আইনের সময়োপযোগিতা নিয়েও প্রশ্ন এসেছে।
কপিরাইট অফিসের আয়োজনে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের অংশগ্রহণে এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কপিরাইট বোর্ডের সদস্য কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, যিনি আর্টস ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক।
তিনি বলেন, মেধাসম্পদের পাইরেসি ঠেকাতে কপিরাইট আইন কার্যকর করা গেলে রয়্যালিটির দিক দিয়ে অংশীজনরাই লাভবান হবেন।
“মেধাসম্পদের বিকাশে, বিশেষ করে যাবতীয় বিমূর্ত অভিব্যক্তির নৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক বিকাশে কপিরাইট আইনের ভূমিকা নতুনভাবে ব্যাখ্যা ও অনুধাবন করা অত্যাবশ্যক। কেননা এই আইনের বিকাশ না হলে আমাদের দেশের মেধাসম্পদের অর্ধেকাংশ অবিকশিত থেকে যাবে।
“কপিরাইট আইনটি বাংলাদেশে দীর্ঘকাল থেকে প্রচলিত থাকলেও তা সময়ের প্রয়োজনে হালনাহাদ করা হয়নি এবং এ সম্পর্কে অংশীজনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে সচেতনতাও নূন্যতম।”
মেধাসম্পদের ক্ষেত্রে কপিরাইট আইনে অধিকার আদায় ও লঙ্ঘনের প্রতিকারের বিধান থাকলেও তা সময়োপযোগী কি না- সে প্রশ্ন তোলেন নূরুল হুদা।
এই কপিরাইট বিশেষজ্ঞ বলেন, “মেধাসম্পদ ইস্যুতে অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে প্রকৃত স্বত্বাধিকারীর সচেতনতা, উদ্যোগ ও প্রাতিষ্ঠানিক সংঘবদ্ধতার মারাত্মক অভাব রয়েছে। বাংলাদেশে এখনো সবক্ষেত্রে অংশীজনের কপিরাইট সোসাইটি সক্রিয় নেই। ফলে স্বীকৃতি, সুরক্ষা বা আদায় পদে পদে বিঘ্নিত।
সব ক্ষেত্রে পাইরেসি উৎখাত করতে পৃথক আইপি আদালত গঠন করে বিরোধের দ্রুত প্রতিকার করার পাশাপাশি কপিরাইট সোসাইটি গঠনের পরামর্শ দেন নূরুল হুদা।
অনুষ্ঠানের সভাপতি কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী জানান, কপিরাইট আইনের খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। কপিরাইট অফিস ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সেই খসড়া মতামতের জন্য দেওয়া হয়েছে। অংশীজনরা চাইলে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত নিজেদের পরামর্শ জানাতে পারবেন।
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর জানান, মোবাইল অপারেটর, টেলিভিশন চ্যানেল ও এফএম রেডিও থেকে সংগীতশিল্পীরা যেন তাদের প্রাপ্য রয়্যালিটি পান, সেজন্য তিনি আইন, স্বরাষ্ট্র, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন।
কপিরাইট টাস্কফোর্সে এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন বলে জানান মন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, “কপিরাইট আইন কার্যকরে এখন আমাদের প্রযুক্তির ব্যবহারও বাড়াতে হবে। আমাদের গ্রামেগঞ্জে লোকশিল্পীরা রয়্যালিটি ইস্যুতে নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে আমাদের।”
কপিরাইট আইন সম্পর্কে সচেতনতা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “যারা সৃজনশীল কাজের সঙ্গে জড়িত, তারা সবাই এ আইনের অংশীজন। আমাদের অর্জিত মেধাসম্পদ অন্য কেউ দাবি করলে আমরা সাধারণত আদালতে যেতে তথা আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাই না। আমাদের এ মনোবৃত্তি পরিহার করতে হবে। মেধাসম্পদ সংরক্ষণ করার জন্য আমাদের সবাইকে শক্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে।”
শুদ্ধ সংগীতের চর্চা, বিকাশ ও সংরক্ষণের মাধ্যমে ‘মেধাসম্পদ সুরক্ষায় বিশেষ অবদান রাখায়’ বেঙ্গল ফাউন্ডেশনকে এ অনুষ্ঠানে সম্মাননা পদক দেওয়া হয়। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী পদক গ্রহণ করেন।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মসিউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক খান মাহাবুব, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ ও সংগীত পরিচালক শেখ সাদী খান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।