যুদ্ধাপরাধ: যশোরের ৫ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের মামলায় যশোরের বাঘারপাড়ার মো. আমজাদ হোসেন মোল্লাসহ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চুড়ান্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 April 2018, 12:02 PM
Updated : 16 April 2018, 12:10 PM

সোমবার সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেনে তদন্ত প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক।

তিনি বলেন, “ছয় খণ্ডের প্রতিবেদনে আসামিদের বিরুদ্ধে আটক, নির্যাতন, হত্যার চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে।এটি তদন্ত সংস্থার ৬৩তম প্রতিবেদন। মঙ্গলবার এ প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে দাখিল করা হবে।”

আসামিদের মধ্যে আমজাদ হোসেন মোল্লা (৭৭) গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। বাকিরা পলাতক।

তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ছয়জনকে হত্যা, আটক, নির্যাতনের প্রমাণ উঠে এসেছে।

সানাউল হক বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আসামিরা যশোরের বাঘারপাড়া চাঁদপুর গ্রামের মো. ময়েনউদ্দিন ময়না ও মো. আয়েনউদ্দিন আয়নাকে অপহরণের পর হত্যা করেছে বলে তথ্য-উপাত্ত উঠে এসেছে তদন্তে।

“এছাড়া একই থানার ও একই গ্রামের ডা. নওফেল উদ্দিন বিশ্বাসকে আটকের পর হত্যা করে আসামিরা। ডা. নওফেল মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোক ছিলেন। তিনি একজন হিতৈষী ব্যক্তি ছিলেন। সাধারণ মানুষসহ আহত মুক্তিযোদ্ধাদের তিনি চিকিৎসা দিতেন। ”

তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক আরো জানান, বাঘারপাড়া থানার গাদইঘাট গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোক, মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারী সুরত আলী বিশ্বাস ও মোক্তার বিশ্বাসকে অপহরণ করে আটকে রেখে নির্যাতনের পর হত্যা করে আসামিরা। এছাড়াও মাগুরার শালিখা থানার সীমাখালী বাজার ঘাটের মাঝি রজব আলী বিশ্বাসকে আটক করে হত্যা করে তারা।

সানাউল হক বলেন, এসব ঘটনার আসামিদের বিরুদ্ধে যেসব তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে তার সপক্ষে সাক্ষিদের বক্তব্যও নেওয়া হয়েছে।

আটক আসামি আমজাদের পরিচয় তুলে ধরে সানাউল হক বলেন, যশোর বাঘারপাড়া থানার প্রেমচারা গ্রামের মৃত সোবহান মোল্লার ছেলে আমজাদ হোসেন মোল্লা বাঘারপাড়া থানার রাজাকার কমান্ডার ছিলেন।

১৯৭১ সালে মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল এ মামলার তদন্ত শুরু হয়। যশোর জেলা প্রশাসকের দেওয়া রাজাকারদের তালিকাতেও এই পাঁচ আসামির নাম রয়েছে। এ মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ৪০ জনকে।

আসামিদের বিরুদ্ধে চার অভিযোগ

অভিযোগ-১: ১৯৭১ সালের ৩ ভাদ্র বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বাঘারপাড়া থানার উত্তর চাঁদপুর গ্রামের মো. ময়েনউদ্দিন ওরফে ময়নাকে তার বাড়ি থেকে আটক করে প্রেমচারা রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায় আসামি মো. আমজাদ হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা।

সেখানে তিনদিন আটক রেখে নির্যাতন করে ৬ ভাদ্র বেলা ১২টার দিকে খুড়দা গ্রামের বিজয় দাশের দেবদারু বাগানে কুয়ার পাশে দাঁড় করিয়ে আসামি মো. আমজাদ হোসেন মোল্লা গুলি করে হত্যা করে ময়নাকে।

অভিযোগ-২: ১৯৭১ সালের ২০ জুলাই বেলা ১টার দিকে আসামি আমজাদ হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা বাঘারপাড়া খাজুরা বাজার থেকে ডা. নওফেল উদ্দিন বিশ্বাসকে আটক করে প্রেমচারা রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরদিন বেলা ১২টায় থানা সদরের মহিরাম গ্রামের মাঠে গুলি করে করে হত্যা করে।

অভিযোগ-৩: আমজাদ হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা ১৯৭১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সকাল ৮-৯টার দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারী সুরত আলী বিশ্বাস, মোক্তার বিশ্বাসকে তাদের বাড়ি থেকে ধরে প্রেমচারা রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে তিনদিন নির্যাতনের পর ২৩ সেপ্টেম্বর বেলা ১২টার দিকে খুড়দা গ্রামের বিজয় দাশের দেবদারু বাগানে কূয়ার পাশে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে লাশ কূয়ায় ফেলে দেয়।

অভিযোগ-৪: মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের পার করে দেওয়ার কারণে মাগুরার শালিখা থানার সীমাখালী বাজার ঘাটের মাঝি রজব আলী বিশ্বাসকে ১৯৭১ সালের ১৫ অগাস্ট আসামি আমজাদ হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা ধরে নিয়ে যায়। পরে প্রেমচারা গ্রামের চিনারাশি আম বাগানে নিয়ে রজব আলী বিশ্বাসকে জবাই করে হত্যা করে।