উপাচার্যের কার্যালয় অবরুদ্ধকারীদের বহিষ্কার চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে একটি সংবাদ সম্মেলন হয়েছে, যাতে গাঁজা সেবনের অভিযোগে আটক এক ছাত্রলীগ নেতাও উপস্থিত ছিলেন।
Published : 27 Jan 2018, 06:23 PM
শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এই সংবাদ সম্মেলনে ‘সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’ যে সব দাবি তুলেছে, তা ছাত্রলীগের দাবির অনুরূপ।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যানারের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক, ফলিত রাসায়ন বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র আবদুল্লাহ আল নোমান।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বেনজীর আহমেদ, ইসলাম শিক্ষা বিভাগের সাদিকুল ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান, ভূতত্ব বিভাগের গাজী আরিফুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন।
বেনজীর সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সাবেক সমাজসেবা ও রক্তদান-বিষয়ক সম্পাদক। তিনি ২০১৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার কারওয়ান বাজার এলাকায় গাঁজা সেবনের সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন। তেজগাঁও থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা হলে পরে জামিনে মুক্তি পান তিনি।
গত ২৩ জানুয়ারির ঘটনার পরদিন উপাচার্য ভবনে হামলাকারীদের শাস্তি চেয়ে সচেতন শিক্ষার্থী ব্যনারে যে সমাবেশ হয়েছিল, তাতে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে সক্রিয় থাকা বাম ছাত্র সংগঠনের নেতাদের ‘গাঁজাখোর’ বলেছিলেন।
‘সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’র সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাদিকুল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি সোসাইটির সভাপতি ও ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ- সম্পাদক। মাহমুদুল হাসান সাইক্লিং ক্লাবের সভাপতি ও হাজী মুহাম্মদ মুহসিন হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নাট্য ও বির্তক বিষয়ক সম্পাদক।
লিখিত বক্তব্য আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বাম ও ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত কিছু অছাত্র ও বহিরাগত উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করে।
“তারা রড,,হেক্সোব্লেডসহ অন্যান্য দেশি অস্ত্র ব্যবহার করে উপাচার্যের অফিসের প্রবেশের পথের তিনিটি গেইট ভেঙে তার কার্যালয়ের প্রবেশ করে মাননীয় উপাচার্যকে চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে।
“ওই সময় তারা উপাচার্যকে অশ্লীলভাবে গালাগালি ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং উপাচার্যের জীবননাশের আশঙ্কা তৈরি হয়। পরবর্তীতে কিছু শিক্ষার্থীসহ ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর সাহায্যে উপাচার্যকে মুক্ত করে নিরাপত্তা প্রদান করা হয়।”
৭ কলেজের অধিভুক্তি বাতিলে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ ব্যানারে আন্দোলনকারীদের উপর চড়াও হওয়া ছাত্রলীগ নেতাদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন করছিল বাম সংগঠন নেতৃত্বাধীন ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’।
গত ২৩ জানুয়ারি তারা প্রশাসনিক ভবনের ফটক ভেঙে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানকে অবরুদ্ধ করলে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা গিয়ে আন্দোলনকারীদের পিটিয়ে উপাচার্যকে মুক্ত করে।
তারপর ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীরা’ তাদের উপর হামলাকারীদের শাস্তি দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছে; অন্যদিকে তাদের শাস্তি দাবিতে আন্দোলন করছে ‘সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’, যাতে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা সক্রিয়।
ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, তারা সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে ‘অছাত্রদের হাত থেকে’ উপাচার্যকে উদ্ধারে এগিয়ে গিয়েছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে নোমানও বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক উপাচার্যের গায়ে হাত তোলার মতো ধৃষ্টতা দেখাবে না। যারা এ ধরনের জঘন্য কাজ করতে পারে, তারা কখনোই আমাদের সহপাঠী হতে পারে না।
“আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা দল-মত নির্বিশেষে এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই এবং বিশ্ববিদ্যালয় যাতে তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে, সেই দাবি জানাচ্ছি।”
সেদিন হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, “পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে কিছুটা হাতাহাতির মতো ঘটনা ঘটে। যেখানে বাম সংগঠন ও ছাত্রলীগের নারীকর্মী আহত হয়।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নোমান বলেন, “ওই দিন মারামারিতে জড়িয়েছে বাম সংগঠন এবং ছাত্রলীগ। এই ঘটনায় ছাত্রলীগের কেউ যদি জড়িত থাকলে, তাদেরও শাস্তি দাবি করছি।”
সেদিনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিবৃতিতে উপাচার্যের প্রতি ‘বল প্রয়োগ এবং আক্রমণের’ কথা বলা হয়েছিল; যদিও ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থী’রা উপাচার্যের উপর হামলার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
‘সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দর’র সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্যের গায়ে হাত তোলার অভিযোগ করা হয় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে।
এই বক্তব্যের পক্ষে কোনো প্রমাণ আছে কি না- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে নোমান বলেন, “গায়ে হাত তোলার ঘটনা সত্য, এখানে উপস্থিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সামনে এই ঘটনাটি ঘটেছিল।
“গায়ে হাতে তোলার বিষয়টি নতুন বলছি তা নয়, ২৪ জানুয়ারি থেকে দাবিটি করছি। সেটার সুস্পষ্ট প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে।”
‘সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’র সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়ায় ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’র সমন্বয়ক মাসুদ আল মাহাদী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কারও ব্যানার চুরি করে নয়, নিপীড়নের বিচার চাইছি আমরা। আমাদের আন্দোলনে যারা ছিল, সবাই শিক্ষার্থী।”
এই আন্দোলনে অন্য শিবির-ছাত্রদলের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “আন্দোলনের মধ্যে কেউ যদি ঢুকে পড়ে, তার দায়ভার আমাদের না।”
ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগের বিষয়ে মাহাদী বলেন, “শিক্ষার্থীরা ন্যায্য দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে গেলে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার মতো অভিযোগ দেয়, এটা নতুন কিছু না। পাকিস্তান আমলের এই অভিযোগ ছিল, এখনও তা বলা হয়ে থাকে।”